ICC T20 WORLD CUP: জয়ের মুকুট ভারতের মাথায়: বিশ্বজয়ী ভারত
ভারতীয় দল দ্বিতীয় বারের জন্য ICC T20 ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপের শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়েছে।
17 বছর পর আবার জয়ের খেতাব ভারতের মাথায়।২০০৭ সালে আইসিসি প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আইসিসির তিনটি বড় ইভেন্টের একটি। এই কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়ন টিম কিন্তু ইন্ডিয়া। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০০৯ সালে যখন টুর্নামেন্ট টি দ্বিতীয়বারের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল তখন পাকিস্তান সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং এখনো পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড সর্বাধিক দুবার করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। আজ সেখানে ভারতের নাম যুক্ত হলো।আইসিসি প্রতি দু’বছর অন্তর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজন করে।
২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে, তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ১৭ বছর আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ভারতের। ধোনির পর ভারতীয় টিমকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিরাট কোহলি রোহিত শর্মা কিন্তু কোন অধিনায়কই ভারতের ট্রফির খরা কাটাতে পারেনি। গত বছরেও ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে ভারতীয় টিমকে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে। আর এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রোহিতের কাছে ছিল শেষ একটা সুযোগ, প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা কে হারিয়ে ট্রফির খরা কাটানো ভারতের জন্য এবং নিজেকে প্রমাণ করে ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে হাসি মুখে বিদায় জানানো সাদা বলকে।ফাইনালে তার পারফর্মেন্স কিছুটা হতাশ করলেও পুরো সিরিজে নিজের কাঁধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে টেনে নিয়ে গেছেন।মনে রাখতে হবে ক্রিকেট ইজে টিম গেম, আর তাইতো বার বার দলে পরিবর্তন না করে ভরসা রেখেছেন টিম এর ওপর। বিরাট কোহলি-ই যার প্রকৃত উদাহরণ, তাই ম্যাচ শেষে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে কিছুটা আবেগপ্রবন হয়ে পড়লেন কোহলি, অনেক সমালোচনা হয়েছে তার খারাপ ফ্রম নিয়ে পুরো সিরিজটাতেই যা অব্যহত ছিল ,কিন্তু ফাইনালে তিনি নিরাস করেননি, রোহিতের মর্যাদার যথাযথ মান তিনি রেখেছেন। একে একে যখন উইকেটের পতন ঘটছে, রোহিত শর্মা ভালো শুরু করেও রান পাননি, সূর্যকুমার, পন্থরা খেললেন দায়িত্বজ্ঞানহীনদের মতো। এই পরিস্থিতিতে কোহলি নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে না গেলে যে কি হতো, তা ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা ভালমতোই জানেন। সারা দেশ চেয়েছিল, ফাইনালে অন্তত বিরাট কোহলি ভাল খেলুক, তিনি নিরাশ করেননি অগণিত ভক্তকূলকে। কোহলির এই ইনিংস মনে থাকবে তাঁর ভক্তদের যেখানে তার ৫৯ বলে ৭৬ রান দলকে খারাপ সময়েও নতুন দিশা দেখালো।তবে মনে থেকে যাবে সূর্যকুমার যাদব এর অসাধারণ ক্যাচ, এই উইকেটই ভারতের জয় একরকম নিশ্চিত করে দেয়। মনে থেকে যাবে,অক্ষর প্যাটেল এর অলরাউন্ডার পারফরম্যান্স। বুমরাহ, কুলদ্বীপ, পান্ডিয়া,আরশদীপ,জাদেজার মতো ভারতের একের পর এক বিধ্বংসী বোলাররা যেভাবে প্রতিবার প্রতিপক্ষের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছে তা দেখে বলা-ই যায় যে ভাগ্যই এতদিন কাপ পাওয়া থেকে ভারতকে আটকে রেখেছিল।
ভারতীয় ক্রিকেটের রাহুল দাবির এতদিন ব্রাত্যই ছিলেন।২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে তিনি কোচের দায়িত্ব নেন রবি শাস্তির জায়গায়। তিনি দলে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন একাধিক তরুণ প্লেয়ারদের সুযোগ দেন। এরপর একের পর এক আইসিসি ট্রফি তার সামনে আসতে থাকে। কিন্তু সাফল্য আসেনি তিনি চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি টিম ইন্ডিয়াকে,খুব কাছে গিয়েই অধরা থেকেছে সাফল্য। এ নিছক ভাগ্যের পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয় তাইতো তিনি ফাইনাল খেলার আগে সাংবাদিকদের সামনে বলেইছেন যে ট্রফি জেতার জন্য ভাগ্যের প্রয়োজন এখন শুধু তার। ২০১৩ সালের পর থেকে ট্রফির খরা চলছে ভারতীয় ক্রিকেটে।ভারতের কোচ হিসাবে রাহুল দ্রাবিড়ের এটাই শেষ ম্যাচ। বিরাট এবং রোহিতেরও এটাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ।তবে এই তিনটি মানুষ-ই ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসে ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ ধন্য হয়েছেন।এবার হাসিমুখে তারা বাইশ গজের দায়িত্ব তুলে দিতে পারবেন নতুন প্রজন্মের হাতে।
অন্যদিকে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আফ্রিকারা প্রথমবার কোন বিশ্বকাপের ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্যদেবী বিরূপ-ই থাকলেন তাদের প্রতি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চোকার্সই থেকে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।7 রানে পরাজিত হলো ভারতের কাছে।যে দলটি ডেভিলিয়ার্স, জ্যাক ক্যালিস, ডেল স্টেইন, কুইন্টন ডি কক,ডেভিড মিলারের মত এত ভালো ভালো প্লেয়ার বিশ্বকে দিয়েছে সেই দলটির ট্রফির খরা যে কোনো ক্রিকেট প্রেমির হৃদয়ই ব্যাথিত করবে।
এতদিন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখে কাঁদছিলেন রোহিত। অবশেষে হাসলেন তিনি, হাসলো দল, হাসি ফুটলো প্রায় ১৪০ কোটি ভারতীয়র মুখে।দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেশকে করলেন বিশ্বসেরা। ফাইনাল জিতে মাঠেই শুয়ে পড়লেন রোহিত। আবার কাঁদলেন, কয়েক ফোঁটা নোনা জল মিশে গেলো বার্বাডোজ এর মাটিতে। তবে এই কান্না স্বস্তির, জবাব দেওয়ার,
বিশ্বকাপ জেতার। ম্যাচ শেষ, বৃষ্টি নামলো খানিক সত্যিই বুঝি খরা কাটলো ভারতের!
Pingback: Neeraj Chopra: এক থ্রোতেই ফাইনালে! - Pratibedan.com