ভারতীয় ক্রিকেটে ছন্দপতন: অবসর ঘোষণা কোহলি,রোহিত ও জাদেজার।
জিতেও হারালাম অনেককিছু :
অনেকটা অ্যাভেনজার্স এন্ডগেম এর মত, আমরা যুদ্ধ জিতলাম ঠিকই কিন্তু যেন হারিয়ে ফেললাম আমাদের বেশ কিছু অ্যাভেনজার্সকে।
কোহলি ও রোহিত উভয়েরই ভারতের জন্য অসাধারণ টি২০আই ক্যারিয়ার ছিল। কোহলির অভিষেক হয় ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। টি২০ যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের জুন মাসে।তার পর থেকে প্রতিটি টি২০ বিশ্বকাপে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কোহলি ১৪ বছরে তিনি ১২৫টি টি২০আই খেলেছেন, যেখানে তিনি ৪১৮৮ রান করেছেন, যার মধ্যে একটি শতরান এবং ৩৮টি অর্ধশতরান রয়েছে। খেলার প্রতি তাঁর অক্লান্ত নিবেদন এবং আবেগ তাকে টি২০-তে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক করেছে, তাঁর সতীর্থ রোহিত শর্মার পরেই।
অন্যদিকে, রোহিতের গৌরবময় টি২০ ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে এই ফর্ম্যাটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে, তার সংগ্রহ ১৫৯ ম্যাচে ৪২৩১ রান। টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি শতরান করার রেকর্ডও তার ঝুলিতে, যার সংখ্যা পাঁচটি। তাঁর টি২০আই যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালের প্রথম টি২০ বিশ্বকাপের সাথে, যেখানে তিনি ভারতের প্রথম শিরোপা জয়ে প্রথম একাদশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৭বছর পর আবার অধিনায়ক হিসাবে ভারতকে এনে দিলেন খেতাব।
কোহলি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফাইনালে ৫৯ বলে ৭৬ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতার পর অবসরের ঘোষণা দেন। বার্বাডোসের কেনসিংটন ওভালে ২০২৪ সালের আইসিসি মেনস টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতের এই ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটসম্যান টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করেন।
কোহলির দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস ছিল ভারতের হয়ে তাঁর শেষ টি২০আই ইনিংস, এবং এটি বৃথা যায়নি। পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের হাতে ব্যাটন তুলে দেওয়ার জন্য তিনি দ্বিতীয়বার ভাবেননি।
১২৫টি টি২০আই ম্যাচে, কোহলি ৪১৮৮ রান করেছেন ৪৮.৬৯ গড়ে, যেখানে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ১২২। এটি ছিল তাঁর একমাত্র টি২০ শতরান – যা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এসেছিল।
বছরের পর বছর ধরে, কোহলি বড় বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এবং ভারতের হয়ে টি২০আই খেলার শেষ দিনে তিনি সেই ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত হননি।
কোহলি তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মার জন্য ছিলেন খুবই আনন্দিত, কারণ তিনি তার বহুল প্রতীক্ষিত বিশ্বকাপটি জিতেছিলেন অধিনায়ক হিসাবে।
তবে এটি ছিল রোহিতের দ্বিতীয় টি২০ বিশ্বকাপ শিরোপা, কারণ প্রথমটি তিনি জিতেছিলেন ২০০৭ সালে কিংবদন্তি এমএস ধোনির নেতৃত্বাধীন ট্রফি জেতা ভারতীয় দলের অংশ হিসাবে।ম্যাচের পর কোহলি বলছিলেন – “আইসিসি টুর্নামেন্ট জিততে আমাদের সকলকেই একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষা করতে হয়েছে। এটি শুধু আমি একা নই। আপনি এমন একজনের দিকে তাকান যেমন রোহিত। তিনি নয়টি টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছেন। এটি আমার ষষ্ঠ। তাই, রোহিত দলের অন্য যে কারও থেকেই এটির বেশি দাবীদার।”
তবে, কোহলি এও স্বীকার করেছিলেন যে ফাইনালে এসে তার মনোবল খুব প্রত্যাশাহী ছিল না, কারণ গ্রুপ এবং সুপার এইট স্টেজে তার খারাপ পারফর্মেন্স।
টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা কে হারিয়ে ঐতিহাসিক সাত রানের জয়ের পরে ভারতীয় ক্রিকেটের দুটি মহানায়ক, রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি টি-২০ থেকে অবসর ঘোষণা করেন। বিসিসিআই থেকে তাদের একটি হৃদয়পূর্বক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।
ম্যাচ জেতার পর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাও রবিবার T20 আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন।কোহলি ও রোহিত এর মতো তিনিও মনে করেন এবার নতুন প্রজন্মের হাতে ব্যাটন তুলে দেওয়ার সময় এসেছে।
রবিবার, ৩৫ বছর বয়সী জাদেজা Instagram এ তাঁর আইসিসি T20 থেকে অবসর ঘোষণার করেছিলেন। তবে তিনি এখনও ODI এবং টেস্ট খেলতে থাকবেন।
ট্রফি হাতে ইন্সটাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করে জাদেজা লিখেছিলেন।”হৃদয়ে ধন্যবাদের সহিত, আমি T20 আন্তর্জাতিক থেকে বিদায় জানাই,”
জাদেজা ১৯৮৮ সালের ৬ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জমনগর, গুজরাটে। জাদেজা, যাকে সতীর্থরা ‘জাড্ডু’ এবং ‘স্যার জাদেজা’ বলে সম্বোধন করে, ২০০৯ সালের T20 বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ডেবিউ হয়।
তবে ক্রিকেটে তার আগমন ঘটে ২০০৮ সালের রাজস্থান রয়েলসের হয় খেলার সময়, যখন একটি তরুণ অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি ব্যাট এবং বল উভয় বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, এবং প্রতিযোগিতায় তার ফিল্ডিং ছিল নজরকাড়া।
২০১২ সালে, জাদেজাকে প্রায় ৯.৮ কোটি টাকায় চেন্নাই সুপার কিংস কিনেছিল,ওই বছরের খেলোয়াড়দের নিলামে সেই ছিল সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়।
সিএসকের হয় জাদেজা তিনটি IPL খেতাব জিতছেন। ২০২৩ সালে ফাইনালে গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে শেষ বলে চার হিট করে ম্যাচের খেলোয়াড় হিসাবে ম্যাচটির জয়ের জন্য ‘প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ’ ও পেয়েছিলেন।ভারতের জন্য, জাদেজা ছয়টি T20 বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন, এবং শেষটিতে সফল হয়ে ঘোষণা করলেন অবসর।
ছোট ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাদেজা ৭৪টি ম্যাচ খেলেছেন। স্কোর করেছেন ৫১৫ রান এবং ৫৪ উইকেট নিয়েছেন।
তার নির্ভুল বোলিং দক্ষতার কারণে তিনি ব্যাটারদের জন্য একটি ভয়ানক প্রতিপক্ষী হয়ে উঠেছিলেন, বিশেষত মধ্যম ওভারে।
“তার T20 ক্রিকেট ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি ক্রমাগত ভালো পারফর্মেন্স দিয়ে গেছেন। টিম এর খারাপ সময়ে ম্যাচের ফল পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তার ছিল।
তাঁর বোলিং এর পাশাপাশি, জাদেজার ফিল্ডিং তাকে তার প্রজন্মের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে আলাদা করে চিহ্নিত করে, যিনি তার দ্রুততার এবং ক্রীড়াশীলতার জন্য জনপ্রিয়।
জাদেজার T20 এর মূল ফিচার হতে পারে তাঁর অসাধারণ ক্যাচ, সরাসরি হিট, এবং খেলা পরিবর্তনকারী রান-আউট করার দক্ষতা।
রোহিত, কোহলি এবং জাদেজার অবসর ঘোষণা ক্রিকেট প্রেমীদের মনে বেশ কিছুটা আঘাত হেনেছে। যারা এতদিন ছিল ভারতীয় ক্রিকেট এর স্তম্ভ তাদের ছাড়া ক্রিকেট কল্পনা করা বেশ কষ্টের। কিন্তু এটাই তো নিয়ম নতুন প্রজন্মের হাতে ব্যাটন তুলেদিতেই হবে, তাই তারা সেই দায়িত্বই পালন করলেন।
Pingback: বিদায় "গব্বর”: ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা হোয়াইট-বল ওপেনারের অবসর - Pratibedan