ভারতের ১০০ টন সোনা আবার ফেরত আসছে ভারতেই।
ভারত তার নিজের দেশের সোনা UK তে রেখেছিল, যা আবার ভারতে ফেরত আনা হচ্ছে, যার পরিমাণ জানা যাচ্ছে 100 টন।
ভারতে যে বিভিন্ন ব্যাংক আছে যেমন – SBI, AXIS, HDFC এই ব্যাঙ্ক গুলোতে আমরা আমাদের সোনা রাখতে পারি এবং ব্যাংক তার পরিবর্তে আমাদের থেকে একটা টাকা চার্জ করে। তেমনি রিজার্ভ ব্যাংকও Bank of England এ সোনা রেখেছিল এবং তার পরিবর্তে একটা বিশাল পরিমাণ টাকা দিতে হতো। কিছু সোনার স্টক তো স্বাধীনতার আগে থেকেই রাখা আছে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডে।
রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে থাকা টোটাল সোনার পরিমাণ 822 মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাত্র ৩০8 মেট্রিক টন “আর বি আই” এর কাছে আছে। এবং ৫১৪ মেট্রিক টন সোনা ভারত বিদেশের ব্যাংকগুলোতে রাখে। এবং সেখান থেকেই ১০০ মেট্রিক টন সোনা ভারতে ফেরত আনা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন এটাই উঠছে যে আমরা এতটা রিস্ক নিয়ে আমাদের এই এত পরিমাণ সোনা কেন আমরা বিদেশের কোন ব্যাংকের ওপর ভরসা করে রেখেছিলাম? কারণ আমরা রিসেন্টলি দেখেছি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ইউরোপের দেশগুলোতে থাকা রাশিয়ার সমস্ত অ্যাসেট সিজ করে দেয়া হয়েছিল। ভবিষ্যতে ভারতের ক্ষেত্রেও তো এরকম কিছু ঘটতেই পারে।
আমরা সাম্প্রতিক কালে যে সোনা আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনছি তা কিন্তু Bank of England থেকে। এই ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডে বিভিন্ন দেশ সোনা রাখে। তার কারণ এটা খুবই সুরক্ষিত। এটা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের ওয়েবসাইটেও বড় বড় করে লেখা আছে যে – বিশ্বে সোনা রাখার তারা দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং এর মতো সুরক্ষা কোথাও নেই, এখান থেকে কখনো সোনা চুরি যায়নি। এতটাই সিকিউরিটি তারা প্রোভাইড করে। এবং ভারতের নিজের দেশের সোনা ফিরিয়ে আনা, এটাই দেখায় যে ভারত সেই সোনা নিজের দেশে রাখতে সমর্থ, তার যথাযথ সুরক্ষা প্রদান করতেও সমর্থ।আমাদের দেশের অভ্যন্তরে সোনা, মুম্বাইয়ের মিন্ট রোডে RBI এর পুরানো অফিস ভবন এবং নাগপুরের ভাণ্ডারে সংরক্ষিত রয়েছে।
তবে এই সোনা বিদেশ থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনার আরো একটা কারণ হচ্ছে এই সোনা বাইরে রাখার ফলে আমাদের সেই দেশকে কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণ একটা টাকা প্রদান করতে হয়। সেই টাকাটা আমাদের বাঁচবে। তবে এটাও ঠিক যে এত পরিমান সোনা আমাদের দেশে রাখার জন্য একটা কঠিন সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, তার জন্যও কিন্তু একটা বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ হবে।
1991 এ ভারতের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে ভারত সোনা বাইরের ব্যাংকে রাখতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ – ভারত বিদেশ থেকে মূলত তেল আমদানি করে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলির সাথে এরকমই লেনদেন চলে ভারতের। কিন্তু 1991 সালে ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, এই ইরাক থেকেই বেশির ভাগ তেল আমদানি করতো ভারত। ফলে তেলের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে সেই সঙ্গে ছিল আমেরিকার চোখ রাঙানি। ভারতে তখন তেলের সংকট দেখা দেয়। তেল কিনতে প্রয়োজন অনেক ডলার, কিভাবে ডলার পাওয়া যায় তারই পথ খুঁজতে থাকে তৎকালীন সরকার এবং ঠিক হয় বিদেশের ব্যাংকে সোনা রেখে ডলার নেওয়া হবে। সেই সোনাই এতদিন বাদে আবার ভারত ফিরিয়ে আনছে দেশে। এটা বিশ্বের কাছে ভারতের সামর্থের পরিচয় করায়। তবে এটাও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে ভারত কিভাবে সোনা নিজের দেশে সুরক্ষিত রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, এই দায়িত্ব নিয়েই ভবিষ্যতে ভারতকে এগিয়ে যেতে হবে।