খবর প্রতিদিন

কোটার প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশ: ৩২ জন নিহত, ছাত্রদের সাথে আলোচনায় রাজি সরকার

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমে বাড়ছে:

বাংলাদেশে কোটার প্রতিবাদে ঢাকা সহ অন্যান্য শহরের শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিগত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের কমপক্ষে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত সংখ্যা ২৫০০ জনেরও বেশি। কারণ আন্দোলনে সহিংসতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে সহিংস হয়ে পড়ছে বারবার-ই। তারা সরকারি চাকরির জন্য যে কোটা ব্যবস্থা, তার সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দেশের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ রূপ নেয়। এই ঘটনার একদিন আগেই রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনে উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।

 

Bangladesh students protest
Bangladesh Students Protest

সপ্তাহ ধরে ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করছে। মূলত তাদের সমাবেশ পাবলিক সেক্টরে চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে। যার মধ্যে 1971 সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়দের জন্য সংরক্ষণও রয়েছে।

২০১৮ সালের ছাত্র ও শিক্ষকরা এই কোটা অপসারণের জন্য মাসব্যাপী প্রতিবাদে নামেন এবং মোট সংরক্ষণ কে ১০% নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই সময় আন্দোলনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল এবং প্রতিবাদকারীরা বাংলাদেশের ছাত্রলীগ এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সেই সময় আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের পর হাসিনা সমস্ত রকম কোটার অপসারণ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু গত মাসে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত সরকারি চাকরির জন্য কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার পর আবার এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের 2018 সালের সিদ্ধান্ত কে বাতিল করে দিয়েছিল। তবে সরকারের আপিলের পর সুপ্রিম কোর্ট উচ্চ আদালতের আদেশ স্থগিত করেছে এবং সরকারের চ্যালেঞ্জ শোনার জন্য ৭ই আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেছে।

 

জুন মাসে ঢাকায় এই কোটার পুনর্বহালের জন্য প্রাথমিক প্রতিবাদ প্রতিরোধ শুরু হলেও Eid-ul-Adha উৎসব শেষ হওয়ার পর ১৭ জুন থেকে এই আন্দোলন বৃহত্তর রূপে শুরু হয়। ৭ জুলাই দেশব্যাপী বাংলা বন্ধ কার্যকর করা হয়। এবং ধীরে ধীরে এই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে।যদিও সুপ্রিম কোর্ট আদেশটির কার্যকারীতা একমাসের জন্য স্থগিত রেখেছেন।

Quota, Bangladesh Students Protest

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূরণ করতে অস্বীকার করলে,বিক্ষোভ গুলি তীব্র আকার ধারণ করে, আদালতের কার্যক্রম উল্লেখ করে।

এই সপ্তাহে হাজার হাজার কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী এবং হাসিনার আওয়ামী লীগ পার্টির ছাত্র শাখার সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় ও বিক্ষোভ গুলি সহিংস আকার ধারণ করে। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বারবার গুলি, টিয়ার গ্যাস এবং শব্দ গেনেড ব্যবহার করেছে। তবে তাতে বিশেষ কোন লাভ হয়নি।

 

আন্দোলন আরো তীব্র হলে কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজধানীর ভেতর মেট্রো রেল পরিষেবা এবং ঢাকার ভেতর দিয়ে যাওয়া সমস্ত রেল পরিষেবা গুলি বন্ধ করে দেয়।

সরকার দেশের বিভিন্ন অংশে মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ করারও আদেশ দিয়েছে। আউটেজ মনিটর নেটব্লকের মতে, বাংলাদেশ একটি “প্রায় সম্পূর্ণ ইন্টারনেট শাটডাউন” এর সম্মুখীন হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার এর আগে বাংলাদেশের পুলিশের ওয়েবসাইট এক্সেস করা যাচ্ছিল না। এবং বর্তমান শাসক আওয়ামী লীগের শাখা বাংলাদেশের ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সরকার ও ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের ফলে অনির্দিষ্টকালের স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলি বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছে।

 

শিক্ষার্থীরা কি দাবি করছে?

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট কোটা ব্যবস্থার অবসান চাইছে যা সরকারি চাকরি অর্ধেকেরও বেশি আসন সংরক্ষণ করে যার মধ্যে রয়েছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা।

 

কোটা ব্যবস্থা কি?

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর তা বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। এই কোটা ব্যবস্থাটি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও মহিলা এবং জেলার পিছিয়ে পড়া জাতি, আদিবাসী সম্প্রদায় ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। ২০১৮ সালে যখন এই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল তখন এই কোটার আওতায় ছিল সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ। সেই ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনা হলে তাতে সকলের জন্য উন্মুক্ত যে চাকরির সংখ্যা সেটা অনেকটাই কমে যাবে। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সুযোগ অনেকটাই হ্রাস পাবে।

 

বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার কি বলছে?

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশব্যাপী যে সহিংস আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীরা যখনই এই আলোচনায় বসার জন্য সম্মত হবে তখনই এই কোটার সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার বসা হবে বলে সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

 

অন্যদিকে হাসিনা প্রাণহানির নিন্দা করেছেন এবং সকলকে সুপ্রিম কোর্টের রায় না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

One thought on “কোটার প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশ: ৩২ জন নিহত, ছাত্রদের সাথে আলোচনায় রাজি সরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *