হিমাচল প্রদেশে বিপর্যয়: মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে শিমলা, মান্ডি ও কুলুতে নিখোঁজ বহু
হিমাচল প্রদেশে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে এখনো পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু ঘটেছে, নিখোঁজ ৫০ জনেরও বেশি।
সংক্ষেপে:
- হিমাচল প্রদেশের বর্তমান পরিস্থিতি:
- মুখ্যমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক:
- রাস্তাঘাট ও সেতুর ব্যাপক ক্ষতি:
- উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম:
- পরামর্শ ও সতর্কতা:
- অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি:
হিমাচল প্রদেশের শিমলা, মান্ডি ও কুল্লু জেলায় একাধিক মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর নিখোঁজ হয়েছেন প্রায় ৫০ জনেরও বেশি লোক, এবং এলকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিমলা জেলার রামপুরের সামেশ খাদ এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির পর এই বিপর্যয় ঘটেছে। মান্ডি জেলার টিককান থালুকোট গ্রামের কাছেও একটি মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ১ জন নিহত এবং ৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন। কুল্লুর জাওন গ্রামেও একটি মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে এবং রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ডেপুটি কমিশনার অনুপম কাশ্যপ জানিয়েছেন, মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে রাস্তাগুলি ধুয়ে গেছে এবং মালানা অঞ্চলে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলে এনডিআরএফ টিম, এসডিআরএফ টিম, পুলিশ এবং হোম গার্ডের দল মোতায়েন করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলছে এবং পরিস্থিতির সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করতে উদ্ধারকারীরা কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক:
হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু এই বিপর্যয়ের পর সচিবালয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে সমস্ত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
রাস্তাঘাট ও সেতুর ব্যাপক ক্ষতি:
হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে সড়ক এবং সেতুগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানালি-চণ্ডীগড় জাতীয় সড়কটি বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারটি মোটর চালিত সেতু এবং পদচারী সেতু ধুয়ে গেছে। এছাড়াও, পার্বতী নদী এবং মালানা খাদের ফুলে ওঠায় কুল্লুর ভূন্টার এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা মালানা I,এবং মালানা II জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর, কুল্লু, সোলান, সিরমৌর, শিমলা এবং কিন্নর জেলার সংবেদনশীল এলাকায় ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, শক্তিশালী বাতাস এবং নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে ফসল, বাগান, পলকা কাঠামো এবং কাঁচা বাড়ির সম্ভাব্য ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছে।
উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম:
জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ), ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ, পুলিশ এবং হোম গার্ডের দলগুলি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু নিশ্চিত করছেন যে সমস্ত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে এবং উদ্ধার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।
আবহাওয়া দপ্তর আজ হিমাচল প্রদেশের সমস্ত জেলার নির্দিষ্ট অঞ্চলে ভারী থেকে খুব ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য ‘কমলা’ সতর্কতা জারি করেছে, শুধুমাত্র কিন্নর, লাহুল ও স্পিতি বাদে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসন, এনডিআরএফ, পুলিশ এবং অন্যান্য উদ্ধারকারীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে।
পরামর্শ ও সতর্কতা:
এইচপি ট্রাফিক, ট্যুরিস্ট ও রেলওয়ে পুলিশ, এক পরামর্শে বলেছে, বর্ষা মরশুমে বিয়াস নদীর জলস্তর বাড়ছে এবং পান্ধো ড্যাম ও লারজি ড্যাম তাদের গেটের মাধ্যমে জল ছেড়ে দেবে। ফলে সাধারণ মানুষকে নদীর তীর থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে, এবং শিশু ও প্রাণীদের দূরে রাখতে বলা হয়েছে।
সড়ক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, ছবি – এক্স
অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি:
হিমাচল প্রদেশে প্রবল বৃষ্টির ফলে মানুষ সহ বহু গবাদি পশুর প্রাণহানি ঘটেছে, পাশাপাশি বহু সড়ক, সেতু এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভূমিধস এবং ধ্বংসাবশেষের কারণে বহু সড়ক অবরুদ্ধ হয়েছে। বিয়াস নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় মহাসড়কটি বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুল্লুর ভাগিপুলে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং পার্বতী নদী এবং মালানা খাদের ফুলে ওঠায় কুল্লুর ভূন্টার এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা মালানা I এবং মালানা II জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
মানালি-চণ্ডীগড় জাতীয় মহাসড়কটি ভূমিধসের কারণে অনেক স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেয়াস নদীর প্রচণ্ড জলের কারণে মান্ডির পান্ডোহ এলাকায় কিছু বাড়িতে জল প্রবেশ করেছে।
এলাকায় কিছু লোক নিখোঁজ হওয়ার এবং বাড়িঘর ও দোকান ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কারণ আধিকারিকরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে মনোনিবেশ করেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন, এনডিআরএফ, পুলিশ এবং অন্যান্য উদ্ধারকারীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। হিমাচল প্রদেশের এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ও তাদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।