Bangladesh Protests: আবার উত্তপ্ত বাংলাদেশ, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রক্তাক্ত বহু
কোটার দাবি মিটলেও বাংলাদেশ এখনো শান্ত হয়নি, সেখানে এখনো রক্ত ঝরছে। শেখ হাসিনার সরকারের অপসারণ চেয়ে ফের রাস্তায় নেমেছে পড়ুয়া ও যুব সমাজের একাংশ। বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ জন। এদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ। এখনো পর্যন্ত আহত হয়েছেন ২৬৪ জন।
ঢাকার কেন্দ্রে অবস্থিত শাহবাগ স্কোয়ারসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিক্ষোভকারীরা বিশাল সংখ্যায় জড়ো হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা লাঠি হাতে নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করেছে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন জেলায় শাসক দল, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়।
মৃতের সংখ্যা ও স্থান
পুলিশ ও ডাক্তাররা জানিয়েছেন, রোববারের সংঘর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ বগুড়া, পাবনা, রংপুর, মাগুরা, কুমিল্লা, বরিশাল ও ফেনিতে এসব মৃত্যু হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলীয় পাবনায় তিনজন, রংপুরে দুইজন, ঢাকার মুন্সিগঞ্জে দুইজন, এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগুরায় একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন, পুলিশ ও হাসপাতালের ডাক্তাররা।
বিক্ষোভকারীদের সংগ্রাম
পুলিশ ইন্সপেক্টর আল হেলাল জানিয়েছেন, ঢাকার মুন্সিগঞ্জে ছাত্রদের সঙ্গে শাসক দলের লোকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। একজনের মাথায় কোপানোর চিহ্ন এবং অন্যজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক পুলিশ সদস্য, বলছিলেন, “পুরো শহর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে,” তিনি যোগ করেন, কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীর একটি দল একটি হাসপাতালের বাইরে গাড়ি ও মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ ও ডাক্তাররা পাবনা ও রংপুরে ছয়জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন। এছাড়াও মাগুরায় আরও দুইজন মারা গেছেন।
বাঁশের লাঠি প্রস্তুত রাখুন:
আসিফ মাহমুদ, দেশের ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান নেতাদের একজন, সমর্থকদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। “বাঁশের লাঠি প্রস্তুত রাখুন এবং বাংলাদেশকে মুক্ত করুন,” তিনি রবিবার ফেসবুকে লিখেছেন।
সামরিক বাহিনী কোটা আন্দোলনের পর শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিল। কিন্তু এখন কিছু প্রাক্তন সামরিক আধিকারিক ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া তার ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি লাল করে সমর্থন জানিয়েছেন।
সামরিক বাহিনীর অবস্থান :
বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান শনিবার ঢাকায় সামরিক সদর দফতরে অফিসারদের সাথে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার প্রতীক। এটি সর্বদা জনগণের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।” একটি সেনা বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন
জুলাই মাসে চাকরির কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর এই আন্দোলন শুরু হয়। সেনাবাহিনী তখন স্বল্প সময়ের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। শনিবার যখন ঢাকায় লক্ষাধিক বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছিল, তখন পুলিশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দর্শকের ভূমিকায় ছিল।
‘স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই’
এই আন্দোলন এখন একটি বৃহত্তর সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে এই আন্দোলনে সমাজের সকল স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করছে। চলচ্চিত্র তারকা, সংগীতশিল্পী এবং র্যাপ গানের মাধ্যমে মানুষকে সমর্থন জানানো হয়েছে। মানুষকে এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে গেছে।
একজন তরুণ মহিলা প্রতিবাদকারী সাখাওয়াত বলেছিলেন, “এটি আর শুধু চাকরির কোটার বিষয় নয়। আমরা চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে।”
সরকার এবং বিরোধী দলের অবস্থান :
সরকারের মুখপাত্র ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, দলীয় কর্মীদের প্রতি দেশের প্রতিটি জেলায় সমর্থন প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করছেন এবং জানুয়ারিতে তিনি টানা চতুর্থ বার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন কোনরকম উপযুক্ত বিরোধী ছাড়াই। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠেছে যে তারা ক্ষমতায় থাকতে বিভিন্নভাবে দমননীতি গ্রহণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে, সরকার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করেছে এবং সরকার বিরোধী মতামত দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
সরকার বিরোধীদের দায়ী করেছে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য। শেখ হাসিনা শনিবার ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। এই আন্দোলন এখন হাসিনার শাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তারা আর ছাত্র নয়, অপরাধী। তিনি জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বন্ধ থাকবে। রবিবার থেকে মোবাইল ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ব্রডব্যান্ডের সাহায্য facebook whatsapp এবং ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিংসা, দেশের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। জনমতের চাপে সরকার এবং বিরোধী দলগুলো কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবে, তা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।