Neeraj Chopra: এক থ্রোতেই ফাইনালে!
নীরজ চোপড়া তার প্রথম প্রচেষ্টাতেই প্যারিস অলিম্পিকের জ্যাভেলিন প্রতিযোগিতার ফাইনালে প্রবেশ করলেন। তিনি শীর্ষে পৌঁছেছেন ৮৯.৩৪ মিটার থ্রো করে। তার এই অসাধারণ পারফরম্যান্স সকল সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিয়েছে এবং ফাইনালে অংশগ্রহণকারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্যও একটি সতর্কতার বানী দিয়ে দিয়েছে।
এক প্রচেষ্টা, এক ফাইনাল, এক নাম:
মাত্র একবারের প্রচেষ্টায় নীরজ চোপড়া প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪ এর পুরুষদের বিভাগের জ্যাভেলিন ফাইনালে পৌঁছেছেন। ৮৯.৩৪ মিটার থ্রো করেছেন যেটা তার এই সিজন এর সেরা, এবং ৯০ মিটারের সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। মঙ্গলবার এই বিশাল থ্রোয়ের মাধ্যমে তিনি গ্রুপ বি-এর যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন শীর্ষ স্থান অধিকার করে।
নীরজের এই বিশাল থ্রো এতটাই সহজ এবং আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তার হাতে জ্যাভেলিনটি ছাড়ার পর কোনও বড় উদযাপন বা চিৎকার তিনি করেননি, যেটা ক্রীড়াবিদদের জন্য খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। যখনই তারা তাদের হাত থেকে জ্যাভেলিনটি তাদের মনের মত ভাবে নিক্ষেপ করে তখন তারা বিভিন্ন রকম চিৎকার করার মাধ্যমে সেটা সেলিব্রেট করে। তবে নীরজ এর ক্ষেত্রে বিষয়টা একদমই রকম ছিল না, তার মুখভঙ্গি ছিল খুবই স্বাভাবিক। একমাত্র ক্যামেরাগুলি যখন জ্যাভেলিনের অবতরণের স্থানটি দেখালো তখনই সবাই তার থ্রোয়ের বিশালতা উপলব্ধি করতে পেরেছিল। থ্রোয়ের পর নীরজের মুখে খুব সহজ আর স্বাভাবিক একটি হাসি ছিল, যা ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। থ্রোটি ছিল ৮৯.৩৪ মিটার।
এই থ্রোয়ের পর নীরজ তার হাত তুলে উল্লাস করেন। তার মুখের ভাবটা স্পষ্টতই বলছিল যে এটি ছিল অনিবার্য, একেবারেই মিস হওয়ার নয়। স্টেড দ্য ফ্রান্স-এর দেয়াল আর তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের হৃদয়ে গভীরভাবে তার উল্লাস প্রতিধ্বনিত হয়েছিল।
টোকিও অলিম্পিকের পুনরাবৃত্তি
টোকিও অলিম্পিকের পারফরম্যান্সের মতোই, প্যারিস অলিম্পিকেও তার পারফরমেন্সর কোনও নড়চড় হয়নি। ২৬ বছর বয়সী নীরজ চোপড়া তার প্রথম থ্রোতেই ৮৪ মিটার স্বয়ংক্রিয় যোগ্যতা চিহ্ন অতিক্রম করেন এবং গ্রুপ বি-এর শীর্ষ স্থান অধিকার করেন।
ফিটনেস নিয়ে উদ্বেগের অবসান
এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা পারফরমেন্স, এটির পেছনে তার বিশাল প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয় যা, ফিটনেস নিয়ে তার উদ্বেগের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে, গেমসের প্রস্তুতির সময় তিনি অ্যাডাক্টর নিগেল এর সমস্যায় ভুগছিলেন, তবে তার কোনো প্রভাব এই থ্রোতে দেখা যায়নি। তার ব্যক্তিগত সেরা রেকর্ড এখনও ৮৯.৯৪ মিটার, যা তিনি ২০২২ সালে অর্জন করেছিলেন।
অন্য ভারতীয় প্রতিযোগী
অন্য ভারতীয় প্রতিযোগী কিশোর জেনা, ৮০.৭৩ মিটার দুর্বল থ্রো করে ১২ জনের ফাইনালে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। জেনার এই দুর্বল পারফরম্যান্স তাকে ফাইনালের জন্য অযোগ্য প্রতিপন্ন করেছে।
অন্য প্রতিযোগীদের পারফরম্যান্স
পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিম, যিনি বর্তমান কমনওয়েলথ গেমস চ্যাম্পিয়ন, গ্রুপ বি-তে ৮৬.৫৯ মিটার থ্রো করে ফাইনালের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন। একই গ্রুপ থেকে গ্রেনাডার অভিজ্ঞ অ্যান্ডারসন পিটার্সও ৮৮.৬৩ মিটার থ্রো করে যোগ্যতা অর্জনে সফল হন।
সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স
নীরজ চোপড়ার পারফরম্যান্স ছিল দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, যা মাত্র কয়েক মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। আসলে এটি ছিল অনেকটা ‘তিনি এলেন, তিনি থ্রো করলেন এবং তিনি জয় করলেন’ টাইপ এর। জেনা গ্রুপ এ-এর যোগ্যতা পরীক্ষায় নবম স্থানে ছিলেন একটি নিম্নমানের ৮০.৭৩ মিটার থ্রো নিয়ে, যা তাকে ফাইনালের জন্য অযোগ্য করে তুলেছে।
অলিম্পিকে যোগ্যতার মানদণ্ড
৮৪ মিটার প্রাথমিক মানদণ্ড। যারা ৮৪ মিটার বা তার বেশি থ্রো করবে, অথবা গ্রুপ এ এবং বি-এর ১২ জন সেরা পারফরমার ফাইনালে প্রবেশ করবে। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার।
জেনার পারফরম্যান্স
জেনার প্রথম থ্রো ছিল ৮০.৭৩ মিটার, এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। শেষ প্রচেষ্টায় ৮০.২১ মিটার থ্রো করেন। গ্রুপ এ-তে জার্মানির জুলিয়ান ওয়েবার প্রথম রাউন্ডে ৮৭.৭৬ মিটার থ্রো করে শীর্ষে থাকেন, সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কেনিয়ার জুলিয়াস ইয়েগো (৮৫.৯৭ মিটার) এবং টোকিও অলিম্পিক রৌপ্য পদকজয়ী চেকিয়ার জাকুব ভাদলেজ (৮৫.৬৩ মিটার) দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকেন।
অলিম্পিকের স্বয়ংক্রিয় যোগ্যতা অতিক্রম
ফিনল্যান্ডের টনি কেরানেন (৮৫.২৭ মিটার) চতুর্থ অ্যাথলেট ছিলেন যিনি ৮৪ মিটার অটোমেটিক যোগ্যতা চিহ্ন অতিক্রম করেন। গত বছর অক্টোবরে জেনা তার ৮৭.৫৪ মিটার থ্রো করে এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পদক জিতে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। এরপর মঙ্গলবারের আগে ছয়টি প্রতিযোগিতায় মাত্র একবার ৮০ মিটার চিহ্ন অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
নীরজ চোপড়ার এই বিশাল থ্রো শুধু তার নিজেরই নয়, দেশেরও মুখ উজ্জ্বল করেছে। প্যারিস অলিম্পিকের ফাইনালে তার স্থান নিশ্চিতের মাধ্যমে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন যে তিনি বর্তমান যুগের অন্যতম সেরা জ্যাভেলিন থ্রোয়ার। তার প্রতিযোগীদের জন্যও একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছেছে। তার প্রতিযোগীরাও নীরজের মুখোমুখি সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত হবে, কিন্তু নীরজ চোপড়ার আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা তাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হবে।