Bangladesh Crisis: ব্যাপক প্রভাব কলকাতার বাণিজ্যে
বাংলাদেশ সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় কলকাতার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলির অবস্থা ভয়াবহ। মারকুইস স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট ও ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের(মির্জা গালিব স্ট্রিট) বিভিন্ন দোকান, হোটেল, অতিথিশালা এবং রেস্তোরাঁ গুলোতে ব্যাপকভাবে ভাটা পড়েছে। মধ্য কলকাতার বাণিজ্য কেন্দ্রের প্রাণশক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সংকটের কারণে।
দামি স্টোরগুলি যা শাড়ি, শেরওয়ানি এবং সালোয়ার স্যুট বিক্রি করে, ঐতিহ্যশালী রেস্তোরাঁগুলি যা সুস্বাদু বাঙালি খাবার পরিবেশন করে, হোটেল, অতিথিশালা, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, মুদ্রা বিনিময়কারীরা এবং এমনকি সস্তা বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক বিক্রেতারাও সবাই বাংলাদেশি ক্রেতাদের উপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ সংকটের প্রভাব:
বাংলাদেশে যখন আগুন জ্বলছে, তখন কলকাতার থাকা অনেক ব্যবসায়ীর মাথায় হাত পড়েছে। তারা তখন প্রত্যেক দিনের ব্যবসায় ভাটা পড়ার চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত। মার্কুইস স্ট্রিটের শামসি ফ্যাশনে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার সময় একটিও গ্রাহক ছিল না। খালি চেয়ারে বসা এক কর্মচারীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি টেলিগ্রাফকে বললেন -“জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ব্যবসা খারাপ চলছে। কিন্তু রবিবার থেকে সবকিছু থেমে গেছে”
স্টোরটি শাড়ি এবং সালোয়ার স্যুট বিক্রি করে।
রাস্তার অন্যদিকে থাকা এক দোকানের কর্মচারী বললেন, একজন বাংলাদেশি গ্রাহকের সঙ্গে আধ ঘণ্টা ব্যবসা মানে, কমপক্ষে ₹৬০,০০০ টাকা মূল্যের ব্যবসা।
ক্রেতার সংখ্যা হ্রাস
গ্লোব থিয়েটারের কাছে থাকা জনপ্রিয় সালোয়ার স্টোর মিলান এ মঙ্গলবার সামান্য কিছু গ্রাহক ছিল, তাদের মধ্যে ছিল কিছু বাংলাদেশি। দোকানটির প্রায় ডজনখানেক কর্মচারীর মধ্যে মাত্র তিনজনই ব্যস্ত ছিলেন।
দোকানটির ম্যানেজার চুনিলাল উমরানিয়া বললেন, “যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকত, আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারতাম না। স্টোরটি ভর্তি থাকত ক্রেতায়”
মিলান এর মত একটি দোকান সাধারণ দিনে প্রায় ৪০০টি সালোয়ার বিক্রি করে, যার বেশিরভাগই বাংলাদেশিদের।
উমরানিয়া আরও বললেন,“আমাদের বাংলাদেশি ভাই ও বোনেরা শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই নয় বরং তাদের পরিবারের জন্যও কেনাকাটা করে। এবং তারা দরকষাকষি করে না,”
বাণিজ্যের পতন
জনপ্রিয় রাঙ্গোলি স্টোরের মালিক নিখিল জৈন আশা করছেন যে, মন্দা স্থায়ী হবেনা। তিনি বলেন, “বাজার অবশ্যই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশ থেকে কম পর্যটক দেখছিলাম। তবে এটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না যে আমাদের চিন্তা করতে হবে। কিন্তু সোমবারের যা হয়েছে তার পর, আমি মনে করি অনেক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। অনেক ব্যবসা বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি আশা করছি এটি দীর্ঘমেয়াদী হবে না”।
নিউ মার্কেটের আশেপাশের হোটেল ও অতিথিশালাগুলিও অনেক খালি কক্ষের কথা জানিয়েছে। আসিফ আলি লাস্কার মারকুইস গেস্ট হাউসের রিসেপশন ম্যানেজার বললেন, “আমাদের ২৯টি কক্ষ আছে। সব খালি,” । মঙ্গলবার বিকেল ৪.৩০টার সময় লাস্কার রাস্তার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এবং অন্য আরেকজনের সাথে কথা বলছিলেন আর প্রত্যেক পথচারীর দিকে আশা নিয়ে তাকাচ্ছিলেন যারা ট্রলি নিয়ে হাঁটছিল।
অতিথিশালা ও হোটেলের ব্যাপক ক্ষতি
মারকুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহকারী সম্পাদক মনোতোষ সরকার বললেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা তীব্রভাবে কমে গেছে। তিনি বললেন, “এই এলাকায় প্রায় ১২০টি হোটেল ও অতিথিশালা রয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই অতিথি সংখ্যা কমে গেছে। বর্তমানে অতিথিরাও দ্রুত দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু সীমান্ত থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে”।
রেস্তোরাঁয় মন্দা
মাছ ও বিভিন্ন মসলার গন্ধ এখনও আসছে কিন্তু রেস্তোরাঁগুলিতে আর আগের মতো ভিড় নেই। আগে, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় বসার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। মঙ্গলবার, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের রাধুনির দুপুর ২টোর সময় কোনও কাজ ছিল না, অথচ মধ্যাহ্নভোজের এই সময় টিতেই সবচেয়ে বেশি কাজের চাপ থাকে অন্যদিন গুলিতে। মালিক এন.সি. ভৌমিক বললেন,“আমরা সাধারণত যে পরিমাণ ভিড় পাই তার এক চতুর্থাংশও পাচ্ছি না। আমরা এখন দিনে ১০ কেজি চাল ব্যবহার করছি, কয়েকদিন আগে যেটা ছিল ৪০ কেজি”।
ভ্রমণ শিল্পে পতন
এক বাস চালক বললেন, মঙ্গলবার বিকেল ১টার সময় কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে মাত্র একটি বাস ছেড়ে গেছে। মঙ্গলবার এটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একমাত্র বাস ছিল। একটি বাস অপারেটরের অফিসের দেয়ালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছিল। মঙ্গলবার, হাসিনার প্রতিকৃতি একটি ক্যালেন্ডার দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সংকটের ফলে কলকাতার বাণিজ্য কেন্দ্রের মন্দা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কায় আছেন এবং আশা করছেন যে এই মন্দা যেন স্থায়ী না হয়। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যত আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
এই সংকটের মোকাবিলায় কলকাতার ব্যবসায়ীরা কীভাবে পুনরুদ্ধার করবেন তা সময়ই বলে দেবে।