খবর প্রতিদিন

আর জি কর-কাণ্ড জন্ম দিচ্ছে বহু প্রশ্নের! বিস্তারিত খবর

৯ আগস্ট শুক্রবার সকালে কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ৩১ বছর বয়সী এক ডাক্তারের মৃতদেহ পাওয়া যায়।পোস্ট-গ্রাজুয়েট প্রশিক্ষণরত ওই ডাক্তারকে হাসপাতালের সেমিনার হলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি রাতের ডিউটিতে ছিলেন এবং বিশ্রামের জন্য সেমিনার হলে গিয়েছিলেন। ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

এর পর থেকেই তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজ্য থেকে দেশ, প্রশ্ন ওঠে কোথায় নারী স্বাধীনতা? কোথায় নারী নিরাপত্তা? রাজ্যের এত বড় একটা হাসপাতালের ভেতরেই যদি এত ঘৃণ্য একটি অপরাধ ঘটতে পারে, তাহলে যেসব মহিলাদের রাতে শহরজুড়ে তাদের জীবিকার প্রয়োজনে বেরোতে হয় তাদের নিরাপত্তা কোথায়? এত বড় একটি ঘটনা ঘটার পরও কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল।

বিষয়টি প্রথমেই সন্দেহজনক হয়ে ওঠে যখন নিহত ডাক্তারের পরিবার ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ তোলে। তার পরিবার অভিযোগ করেছে যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে, বিষয়টি ঢাকার চেষ্টা করেছিল। হাসপাতাল থেকে তাদের জানানো হয়েছিল যে তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তারা যখন তাদের মেয়ের মৃতদেহ দেখে তখন তাদের সন্দেহ হয় এটা খুব স্বাভাবিক আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে না।

পরে, প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখা যায় যে তাকে যৌন নিপীড়নের পর খুন করা হয়েছে, এরপর পুলিশ আত্মহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “তার দু’চোখ এবং মুখ থেকে রক্ত পাত হচ্ছিল এবং মুখের উপর আঘাতের চিহ্ন ছিল। নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে রক্তপাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। তার পেট, বাঁ পা… গলা, ডান হাত, আঙুল এবং… ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন ছিল।”

এদিকে, আরেক পুলিশ আধিকারিক বলেছেন যে প্রমাণগুলি নির্দেশ করে যে ওই মহিলা ডাক্তারকে প্রথমে খুন করা হয়েছিল এবং তারপর তাকে অভিযুক্ত দ্বারা ধর্ষণ করা হয়েছিল।

ওই আধিকারিক পিটিআইকে জানিয়েছেন, “প্রমাণ রয়েছে যে অভিযুক্ত যখন আক্রমণ করেছিল তখন মহিলা ডাক্তার হাসপাতালের সেমিনার হলে একা ঘুমাচ্ছিলেন। মহিলা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে তিনি মৃত, অভিযুক্ত তাকে আরও চাপ দিয়েছিলেন। অভিযুক্ত তাকে খুনের পর ধর্ষণ করতে পারে এমনও একটি সম্ভাবনা রয়েছে,”

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “এটি একটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। তদন্তটি সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা একটি সিবিআই তদন্তের দাবি করছি কারণ পুলিশ প্রথমে বলেছিল যে এটি একটি আত্মহত্যার কেস, পরে বলেছিল এটি একটি খুনের ঘটনা, তারা যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে সে পুলিশ প্রশাসনেরও অংশ,”

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ তার পদ এবং সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি বলেন, “আমাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় করা হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। মৃত চিকিৎসক আমার কন্যাসম ছিল। একজন অভিভাবক হিসেবে, আমি ইস্তফা দিচ্ছি। আমি চাই না ভবিষ্যতে এমন কিছু কারোর সাথে ঘটুক,” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে এত রাতে ওই ডাক্তার সেমিনার রুমের কাছে কেন ঘোরাঘুরি করছিলেন? এটি নিয়েই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং অভিযোগ ওঠে তিনি বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

এর একদিন পর, কলকাতা পুলিশ এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে, যাকে কেসটির মূল অভিযুক্ত বলা হচ্ছে। একটি ব্লুটুথ হেডসেটের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে, যা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছিল। তবে ঘটনাটির ভয়াবহতা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে এটি কোন একজন ব্যক্তির কাজ নয় এর পেছনে আরো অনেকেই জড়িয়ে আছে।

অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়, যিনি বহিরাগত হিসাবে হাসপাতালে প্রায়শই আসা-যাওয়া করতেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৬৪নং (ধর্ষণ) ও ১০৩নং (খুন) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার “পুলিশের লোক” পরিচয় তাকে সাহায্য করেছিল হাসপাতালের প্রতিটি অংশে, কক্ষ এবং ওয়ার্ডে প্রবেশের।নিরাপত্তার এই ফাঁকটি নিরাপত্তা কর্মী এবং দালালদের মধ্যে একটি জোটকে নির্দেশ করে।

ধর্ষণ-খুনের ভয়াবহ বিবরণ দেশজুড়ে শিহরণ সৃষ্টি করেছে, যার কারণে ডাক্তাররা দেশব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দেন।দেশজুড়ে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

RG kar medical College incident
রেসিডেন্ট ডাক্তারদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট, ছবি – এক্স

দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডাক্তাররা এই ভয়াবহ ঘটনার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যান, যার ফলে ওপিডি এবং জরুরী নয় এরকম অপারেশনসহ অন্যান্য সেবা অচল হয়ে পড়ে। রেসিডেন্ট ডাক্তাররা এই মামলার স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং সিবিআই-এর কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করেছেন।

এদিকে, তিনটি জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে, যা কেসটির সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে।

বিক্ষোভকারীরা কলকাতা পুলিশের কাছে কৈফিয়ৎ চেয়েছেন তদন্ত সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এনে এবং হাসপাতালের সমস্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন, এবং তারা বলেছেন যেন এদের অন্য কোথাও পুনরায় নিযুক্ত করা না হয়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ডাক্তার ধর্ষণ ও খুন কেসটি সমাধান করার জন্য পুলিশকে রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, না হলে এটি সিবিআইকে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *