খবর প্রতিদিন

Sunita Williams-কে ফিরিয়ে আনবে স্পেসএক্স: কেন ইসরো সাহায্য করতে পারল না?

ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তার নাসার সহকর্মী বুচ উইলমোর আগামী বছর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের মাধ্যমে।

জুন মাসে বোয়িং স্টারলাইনারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS) এ পৌঁছানোর পর থেকে তারা একটি অপ্রত্যাশিত ভাবে দীর্ঘ সময় সেখানে কাটিয়েছেন। বোয়িং-এর স্টারলাইনারে ত্রুটির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুনীতা এবং বুচ উইলমোরের মহাকাশযাত্রা কেবল একটি টেস্ট মিশন ছিল, যা আট দিনের জন্য পরিকল্পিত ছিল। তবে এই মিশনটি নানা কারণে বিলম্বিত হয়েছে এবং প্রায় ৭৮ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে। অবশেষে, নাসা ঘোষণা করেছে যে তাদের আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের সাহায্যে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। বোয়িং-এর স্টারলাইনার মহাকাশযানটি ক্রুবিহীন অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।

স্টারলাইনার মিশনের সাফল্য ও ব্যর্থতা

বোয়িং-এর স্টারলাইনার মহাকাশযানটি বহু বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে ২০২৩ সালের ৫ জুন মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। এটি মহাকাশে পাঠানোর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া। স্টারলাইনারের যাত্রা খুব সফলভাবে শুরু হলেও, একদিনের মধ্যেই সমস্যার মুখোমুখি হয়। স্টারলাইনারের থ্রাস্টার সিস্টেমে একাধিক ত্রুটি দেখা দেয়, যার ফলে মহাকাশযানটির নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

স্টারলাইনারের ২৮টি থ্রাস্টারের মধ্যে ৫টি কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং হিলিয়াম লিক হতে শুরু করে, যা থ্রাস্টারগুলোকে চাপ দিতে ব্যবহৃত হয়। এই ত্রুটিগুলো স্টারলাইনারের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করে এবং নাসা এবং বোয়িং তৎক্ষণাৎ এই সমস্যার বিষয়ে অবগত হন। এত সমস্যার পরও, স্টারলাইনার আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের সাথে ডক করতে সক্ষম হয়, যা তার ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার প্রমাণ দেয়। তবে নাসা আশঙ্কা প্রকাশ করে যে স্টারলাইনারের সাথে ক্রু নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসা নিরাপদ নাও হতে পারে। এই কারণে, তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে স্টারলাইনারকে ক্রুবিহীন অবস্থায় পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হবে এবং সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে স্পেসএক্স মিশনে স্থানান্তরিত করা হবে।

 Sunita Williams and her NASA colleague Butch Wilmore
সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর, ছবি – ‘X’

নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, “আমাদের মূল মূল্যবোধ হল নিরাপত্তা। স্পেস ফ্লাইট ঝুঁকিপূর্ণ, এমনকি এটি সবচেয়ে নিরাপদ এবং নিয়মিত অবস্থাতেও। একটি টেস্ট ফ্লাইট, প্রকৃতিগতভাবে, নিরাপদ বা নিয়মিত নয়।” এই কথাটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে নাসা কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না এবং তারা সর্বদা নভোচারীদের নিরাপত্তার প্রতি অগ্রাধিকার দেয়।

স্পেসএক্সের মাধ্যমে উদ্ধার: ইলন মাস্কের ভূমিকা:

এই পরিস্থিতিতে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স, সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েছে। নাসার পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস করে স্পেসএক্স “ক্রু ড্রাগন” মহাকাশযানের মাধ্যমে এই মিশন পরিচালনা করা হবে। স্পেসএক্স “ক্রু-৯” মিশনটি আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হবে। স্টারলাইনার যখন পৃথিবীতে ফিরে আসবে, তখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের একটি ডকিং পোর্ট খালি হয়ে যাবে।

এই মিশনের আসল পরিকল্পনা ছিল চারজন ক্রু সদস্য পাঠানোর। তবে, সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে ফিরিয়ে আনার জন্য মিশনে দুইজন ক্রু সদস্যকে কমানো হয়েছে। এখন স্পেসএক্সের ক্রু-৯ মিশনটি শুধু দুইজন ক্রু সদস্য বহন করবে, যাতে উইলিয়ামস এবং উইলমোরের জন্য জায়গা রাখা যায়।

স্পেসএক্সের এই মিশনটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে। এটি স্পেসএক্সের জন্য একটি বড় কৃতিত্ব, কারণ এটি নাসার স্পেস এক্সপ্লোরেশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সফল মিশন পরিচালনা করেছে এবং এই মিশন তাদের সফলতার ধারাকে আরও দৃঢ় করবে।

ইসরোর সীমাবদ্ধতা: কেন ভারত সাহায্য করতে পারল না?

এদিকে, ইসরো চেয়ারম্যান এস. সোমনাথ সম্প্রতি এক পডকাস্টে ইসরোর বর্তমান সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন। যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ইসরো এই উদ্ধার মিশনে সাহায্য করতে পারত কিনা, তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “এই মুহূর্তে, আমরা কিছুই করতে পারি না। আমাদের এমন কোনো মহাকাশযান নেই যা সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করতে পারে। এটি সম্ভব নয়।” সোমনাথ আরও ব্যাখ্যা করেন যে, এই ধরনের মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় মহাকাশযান শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কাছে রয়েছে। তিনি বোয়িং-এর স্টারলাইনারের ত্রুটিগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন যে, বোয়িং স্টারলাইনারে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছিল, লঞ্চটি বহুবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তারা একটি সুযোগ নিয়ে এটি লঞ্চ করেছিল। তবে তারা সুনিতাকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চায় না।

মানব মহাকাশ মিশনের জটিলতা এবং ভবিষ্যৎ

এই পরিস্থিতি মানব মহাকাশ মিশনের জটিলতা এবং চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরে। স্টারলাইনারের এই সমস্যাগুলো মহাকাশে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কতটা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় তা স্মরণ করিয়ে দেয়। নাসার জন্য এই মিশনটি শুধু একটি উদ্ধার কাজ নয়, বরং এটি মহাকাশে মানুষের নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বের দিকে আরও একটি পদক্ষেপ।

ইসরো বর্তমানে গগনযান মিশনের মতো অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা প্রকল্পে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে, এবং এই ধরনের জটিল উদ্ধার মিশনে অংশগ্রহণের জন্য এখনও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তবে এই মিশনগুলি ইসরোর ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়ক হবে। ইসরোর বর্তমান লক্ষ্য হল গগনযান মিশনের সফলতা নিশ্চিত করা, যা হবে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশযান মিশন। তবে ইসরো ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্ধার মিশনে সক্ষম হতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা অর্জন করতে বদ্ধপরিকর।

সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের এই দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থান এবং তাদের স্পেসএক্সের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরে আসার ঘটনা মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। বোয়িং স্টারলাইনারের সমস্যাগুলি এবং স্পেসএক্সের সফল উদ্ধার কাজটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মহাকাশ গবেষণা একটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ, যা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য অত্যন্ত দক্ষতা, প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন।

এই ঘটনাটি ইসরোর জন্যও একটি শিক্ষণীয় মুহূর্ত, যা ভবিষ্যতে তাদের মহাকাশ মিশনগুলিতে উন্নত প্রযুক্তির বিকাশ এবং মানব নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। ইসরোর জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে এই ধরনের জটিল মিশনে সফলভাবে অংশ নিতে পারে। মহাকাশ গবেষণার এই যুগান্তকারী মুহূর্তে, সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের সফল প্রত্যাবর্তন আমাদের মানব মহাকাশ অভিযানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *