Nabanna Abhijan: ভেঙে পড়লো একের পর এক ব্যারিকেড, নবান্ন অভিযান ঘিরে খণ্ডযুদ্ধ
আজ কলকাতার রাস্তায় একের পর এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে নবান্ন অভিযান ঘিরে, যেখানে পুলিশ নবান্ন অভিমুখী প্রতিবাদ মিছিলকে আটকানোর চেষ্টা করছে, কখনও ব্যারিকেড দিয়ে কখনও টিয়ার গ্যাস বা লাঠিচার্জ করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত ৯ আগষ্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সী এক ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে এই মিছিলটি রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন নবান্নে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। শহরের নামকরা এই সরকারি হাসপাতালে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
আজকের এই প্রতিবাদ মিছিলটি কোনও অনুমতি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যদিও হাইকোর্টের নির্দেশ আছে যে শান্তিপূর্ণ কোন আন্দোলনে পুলিশ বাধা দেবে না। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই মিছিলে বিজেপির মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। মিছিলটি আটকে দেওয়ার জন্য প্রায় ৬,০০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যা নবান্নকে প্রায় একটি দুর্গে পরিণত করেছে। ড্রোন ব্যবহার করে প্রতিবাদকারীদের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং ব্যারিকেডগুলি মাটিতে শক্তভাবে স্থাপন করা হয়েছে ও তাতে তেল মাখানো হয়েছে যাতে কেউ তা অতিক্রম করতে না পারে।
মিছিলে যোগ দিল ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক ফোরাম
আজ সকালে, প্রতিবাদকারীদের একটি দল কলেজ স্কোয়ারে জড়ো হয় এবং নবান্নের দিকে পদযাত্রা শুরু করে। তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। অনেক ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক ফোরাম এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, প্রতিবাদকারীরা ব্যারিকেডগুলি হাত দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছে এবং তাতে ভাঙচুর করার চেষ্টা করছে।
যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এই মিছিলকে বিজেপি-সমর্থিত বলে অভিহিত করেছে, কিন্তু আয়োজকরা বলছেন, এটি একটি ছাত্র সংগঠন দ্বারা পরিকল্পিত প্রতিবাদ। তবে, আজকের মিছিলে অংশ নেওয়া অনেক সংগঠনই নথিভুক্ত নয় এবং রাজনৈতিক দলগুলির সাথে যুক্ত অধিকাংশ পরিচিত ছাত্র সংগঠন এই প্রতিবাদ থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে।
ছাত্র নেতাদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে বিতর্ক
আজ সকালে, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, মিছিলের পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া চারজন ছাত্রনেতা মধ্যরাতের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, “মিছিলের আয়োজনের জন্য যারা হাওড়া স্টেশনে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার বিতরণ করছিলেন, সেই চারজন ছাত্রনেতা – শুভজিৎ ঘোষ, পুলকেশ পণ্ডিত, গৌতম সেনাপতি এবং প্রীতম সরকার হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান। তাদের ফোনও বন্ধ এবং তাদের কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আশঙ্কা করছি যে তাদের মমতা পুলিশের দ্বারা আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে। যদি তাদের কিছু হয়, তাহলে মমতা পুলিশকে দায়ী করা হবে।”
পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক মন্তব্য
বঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, এই ছাত্ররা আজকের মিছিলে বৃহৎ আকারের সহিংসতা ঘটানোর পরিকল্পনা করছিল এবং হত্যার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। “জনসুরক্ষা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে,” পুলিশ জানায়। এরপর, শুভেন্দু অধিকারী জানান, চার ছাত্রের পরিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
এদিকে, মিছিলের অন্যতম আয়োজক শুভঙ্কর হালদার বলেছেন যে, তিনি একসময় এবিভিপি-র সদস্য ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে তিনি ওই সংগঠনের সাথে আর যুক্ত নন। তিনি দাবি করেছেন, এটি একটি অরাজনৈতিক প্রতিবাদ।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মিছিলটি ছাত্রদের প্রতিবাদের নামে বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, “এটি একটি বিজেপি-এবিভিপি ষড়যন্ত্র যা অস্থিরতা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা। এটি পুলিশের পোশাক পরে অপরাধীদের গুলি চালানোর ষড়যন্ত্র। আগামীকাল পরীক্ষা রয়েছে। ছাত্ররা কি এমন কাজ করতে পারে? তারা শকুন রাজনীতি করছে।”
রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে আরও জোরালো করে তুলতে দুটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে কিছু মানুষকে “আমাদের বডি দরকার” বলতে শোনা গেছে। যদিও এই ভিডিওগুলির সত্যতা প্রতিবেদন ডটকম যাচাই করতে পারেনি, তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার অভিযোগ করেছেন, “বিজেপির নেতৃত্বকে বলা হয়েছে যে, একটি নন্দীগ্রামের মতো ঘটনা না ঘটলে এবং দেহ পাওয়া না গেলে, বিজেপির পক্ষে কোনও পরিবর্তন আসবে না।”
পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে জনগণের খন্ড যুদ্ধের ছবি উঠে এসেছে, কোথাও পুলিশ জনগনের ওপর লাঠি চার্জ করছে কোথাও কোন পুলিশ কর্মীকে এক পেয়ে জনগণ তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। সাথে রয়েছে ক্রমাগত ইট বৃষ্টি। ব্যারিকেট গুলোর কাছে জনগণকে ছত্রভঙ্গ করতে সারাক্ষণই চলেছে জলকামান, টিয়ার গ্যাস। আগামীকাল বিজেপির তরফ থেকে ডাকা হয়েছে ১২ ঘণ্টার বন্ধ।