খবর প্রতিদিন

১২ বছর ধরে দিনে মাত্র ৩০ মিনিট ঘুমিয়েও দিব্যি সুস্থ জাপানের অন্যতম সফল উদ্যোগপতি Daisuke Hori

ডাক্তাররা প্রায়-ই বলেন সুস্থ থাকার জন্য দিনে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি, কিন্তু সেই প্রচলিত কথাটিকেই ফুৎকারে উড়িয়ে জাপানের দাইসুক হোরির ঘোষণা আলোড়ন ফেলেছে সামাজিক মাধ্যমে। তাঁর দাবি, ১২ বছর ধরে দিনে আধঘন্টা ঘুমিয়েও তিনি দিব্যি সুস্থ আছেন।

জাপানের উদ্যোকপতি দাইসুক হোরি (৪০) তার জীবনের যাপনের এক অস্বাভাবিক এবং সাহসী দাবি করেছেন, যা সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। হোরি দাবি করেছেন, তিনি গত ১২ বছর ধরে দিনে মাত্র ৩০ মিনিট ঘুমিয়ে তার কাজের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছেন। এই অস্বাভাবিক ঘুমের পদ্ধতি তাকে প্রতিদিনের জীবনে আরও বেশি সময় কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং তার জীবনকে বদলে দিয়েছে।

দাইসুক হোরি: একজন বহুমুখী উদ্যোক্তা

দাইসুকে হোরি জাপানের হিয়োগো প্রদেশের বাসিন্দা, যিনি সংগীত, চিত্রাঙ্কন এবং যান্ত্রিক ডিজাইনের প্রতি গভীর অনুরাগী। হোরি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে। তবে, তাকে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এনে দিয়েছে তার অদ্ভুত ঘুমের অভ্যাস, যা তিনি গত ১২ বছর ধরে অনুসরণ করে চলেছেন।

ঘুমের পদ্ধতি এবং এর উৎপত্তি

১২ বছর আগে, হোরি তার ঘুমের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি প্রতিদিনের কাজের সময় বাড়াতে চেয়েছিলেন এবং এর জন্য ঘুমের সময় কমাতে শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তিনি তার ঘুমের সময় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটে নিয়ে আসেন। হোরির মতে, দীর্ঘ সময় ঘুমানোর পরিবর্তে উচ্চ মানের ঘুম অধিক কার্যকর, বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে চান।

তিনি দক্ষিণ চীনের মর্নিং পোস্টকে বলেন, “যাদের তাদের কাজে দীর্ঘস্থায়ী মনোযোগ প্রয়োজন, তারা দীর্ঘ ঘুমের চেয়ে উচ্চ-গুণমানের ঘুম থেকে বেশি লাভবান হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডাক্তার এবং অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ছোট বিরতিতে বিশ্রাম নেয়, তবে উচ্চ দক্ষতা বজায় রাখে।”

টেলিভিশন শোতে হোরির ঘুমের অভ্যাসের পরীক্ষা

জাপানের ইয়োমিউরি টিভির একটি রিয়েলিটি শো ‘উইল ইউ গো উইথ মি?’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে হোরির ঘুমের অভ্যাস নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। এই অনুষ্ঠানে হোরিকে মাত্র ২৬ মিনিট ঘুমাতে দেখা যায়। ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি চাঙ্গা হয়ে ওঠেন এবং জিমে ব্যায়াম করেন। এই অভিজ্ঞতা দেখে অনেকেই তার ঘুমের অভ্যাস সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা

হোরির অনলাইন রিজুমে থেকে জানা যায়, তিনি তার “অতিক্ষুদ্র ঘুম” পদ্ধতি শেখাতে ২,১০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার একজন শিক্ষার্থী জানান তিনি হোরির প্রশিক্ষণের পর তার ঘুমের সময় আট ঘণ্টা থেকে কমিয়ে মাত্র ৯০ মিনিটে নিয়ে এসেছেন। তার মতে, এই পরিবর্তন তাকে আরও সক্রিয় এবং কর্মক্ষম করেছে।

ঘুমের বিজ্ঞান এবং বিতর্ক

ঘুম মানুষের শরীরের পুনর্জীবন এবং মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। বিজ্ঞানীরা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার ঘুমের পরামর্শ দেন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সাধারণ স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। তবে, হোরির দাবি থেকে বোঝা যায় যে, তিনি এই ধারণার বিরুদ্ধে গিয়ে সফল হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য হোরির এই ঘুমের অভ্যাস নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। তাদের মতে, প্রতিটি ব্যক্তির শরীর আলাদা, এবং কিছু মানুষের জন্য কম ঘুম বিপজ্জনক হতে পারে। এ ধরনের ঘুমের অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, এবং মানসিক চাপের সমস্যা।

দাইসুকে হোরির উদাহরণটি দেখায় যে, জীবনধারায় পরিবর্তন এনে কর্মক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। তবে, এই ধরনের পদ্ধতি সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। হোরি যেমন করে দেখিয়েছেন, জীবনকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য উদ্ভাবন এবং উদ্যোগ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তার এই অভ্যাস কেবল তার ব্যক্তিগত কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং অন্যান্যদের জন্যও একটি উদাহরণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা হোরির অভ্যাস নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কিছু গবেষক মনে করেন, মানুষের শরীর দীর্ঘ সময় ধরে এমন কম ঘুমের অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে পারে না। তবে, কিছু গবেষক আবার মনে করেন, উচ্চ মানের ঘুম এবং জীবনধারার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার মাধ্যমে মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।

দাইসুক হোরির জীবনধারা এবং ঘুমের অভ্যাস নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটি স্পষ্ট যে, তিনি তার কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তার অভ্যাস এবং জীবনধারা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে, তবে এটি অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। কম ঘুমের অভ্যাস গ্রহণের আগে অবশ্যই শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া উচিত, কারণ এটি সবসময় সকলের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। হোরির উদাহরণটি প্রমাণ করে যে, প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু চেষ্টা করলে অপ্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তবে, এই ধরনের চর্চার আগে সঠিক পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *