খবর প্রতিদিন

Mpox কী?: ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জারি করলো সতর্কবার্তা, জানুন বিস্তারিত

সম্প্রতি Mpox (যা পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল) ভাইরাসের একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা সর্বশেষ বিবৃতিতে সন্দেহভাজন রোগীদের স্ক্রিনিং, পরীক্ষা এবং সংস্পর্শ শনাক্তকরণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

Mpox কি?

Mpox,যা পূর্বে Monkeypox নামে পরিচিত ছিল, এটি একটি ভাইরাসজনিত জুনোটিক রোগ যা সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবের কারণে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। যদিও এই রোগটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল কয়েক দশক আগে, এর পুনরুত্থান এবং বিস্তার, সম্ভাব্য প্রভাব এবং শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য কৌশলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ইতিহাস ও উৎপত্তি

Mpox প্রথম ১৯৫৮ সালে আবিষ্কৃত হয়, যখন গবেষণাগারে সংরক্ষিত বানরের মধ্যে একটি বসন্তের মতো রোগ দেখা দেয়। এ কারণেই এটি “মাঙ্কিপক্স” নামে পরিচিত হয়। ১৯৭০ সালে, প্রথম মানবদেহে এই রোগটি শনাক্ত করা হয় কঙ্গোতে। এ রোগটি প্রধানত মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার বনাঞ্চলীয় এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল, যেখানে এটি প্রাকৃতিকভাবে দেখা দেয়।

রোগের সংক্রমণ ও লক্ষণ

Mpox একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা প্রধানত পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়, তবে মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমিত হতে পারে। এর সংক্রমণ সাধারণত সংক্রামিত প্রাণীর দেহের তরল, ক্ষত, বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঘটে। মানুষের মধ্যে, ভাইরাসটি শ্বাসনালী, চোখ, নাক, বা মুখের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে।

Mpox patient
Mpox সংক্রমিত রোগীর প্রতীকী ছবি

লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশির ব্যথা, ক্লান্তি, এবং শীঘ্রই দেহের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি যা পরে পুঁজপূর্ণ ঘায়ে রূপান্তরিত হয়। এই ঘা কয়েক সপ্তাহ পর শুকিয়ে যায়, তবে সংক্রমণ প্রায়শই কষ্টদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

Mpox এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

Mpox প্রতিরোধের জন্য কার্যকর টিকা পাওয়া গেলেও, এটির ব্যাপক প্রাপ্যতা নেই। অতীতে, মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে সফলভাবে ব্যবহার করা গুটি বসন্তের টিকাগুলি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, এটি শুধুমাত্র উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বা মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।

রোগের বিস্তার রোধে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে সংক্রমিত ব্যক্তিদের সনাক্তকরণ ও বিচ্ছিন্নকরণ, জনসাধারণকে সচেতন করা, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান।

সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে, এমপক্সের একটি বড় প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, যা দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রাদুর্ভাবের মূল কারণ ভাইরাসটির নতুন রূপ, যা পূর্বের তুলনায় দ্রুত এবং সহজে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি এই প্রাদুর্ভাবের প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, স্ক্রীনিং, এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও, গবেষকরা নতুন ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে কাজ করছেন।

প্রেক্ষাপট ও প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক তথ্য

৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে, কেন্দ্রীয় সরকার Mpox প্রাদুর্ভাবের উপর একটি নির্দেশিকা জারি করে। এর প্রেক্ষাপট হল দিল্লিতে একটি সন্দেহভাজন Mpox কেস রিপোর্ট করা হয়েছে, যেখানে একজন ব্যক্তি সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। এই রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে এবং তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং সংস্পর্শে আসা অন্যান্য ব্যক্তিদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ এবং জনস্বাস্থ্য প্রস্তুতি

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব অপূর্ব চন্দ্রা সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে একটি আনুষ্ঠানিক পরামর্শ জারি করে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই এবং ভারত এই ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সন্দেহভাজন এবং নিশ্চিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন সুবিধা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

নতুন প্রোটোকল এবং এনসিডিসি (NCDC) এর নির্দেশিকা

ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (NCDC) এর নির্দেশিকা অনুসারে, এমপক্সের প্রাথমিক সনাক্তকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। NCDC এর সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে সংক্রমণ প্রতিরোধে, সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া মাত্রই তা জরুরিভাবে রিপোর্ট করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট স্যাম্পল গুলো নির্দিষ্ট ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হবে।

NCDC এর নির্দেশিকা অনুযায়ী:

  • সন্দেহভাজন কেসের নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নিয়ম মানা আবশ্যক।
  • সংক্রামিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ২১ দিনের জন্য নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে।
  • সন্দেহভাজন রোগীদের হোম কোয়ারেন্টাইন এবং নিশ্চিত রোগীদের আইসোলেশন প্রয়োজনীয়।

ভ্যাকসিনেশন ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ

বর্তমানে এমপক্সের জন্য তিনটি ভ্যাকসিন অনুমোদিত হয়েছে, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নির্দিষ্ট পেশা বা পরিস্থিতির জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্যই টিকাদান সুপারিশ করেছে। সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভারতেও এমপক্স টিকাদানের কোনো নির্দেশিকা এখনও পর্যন্ত জারি করা হয়নি।

বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এমপক্সকে একটি আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা (PHEIC) ঘোষণা করেছে। বিশ্বব্যাপী ১২১টি সদস্য রাষ্ট্রে ১০২,৯৯৭টি ল্যাবরেটরিতে নিশ্চিত হওয়া কেস এবং ১৮৬টি সম্ভাব্য কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। যদিও ভারতীয় কেসগুলো এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে, তবুও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন

সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য সচিব অপূর্ব চন্দ্রা বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে জনসাধারণের মধ্যে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করা উচিত নয়। এমপক্সের সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন ৩৪ বছরের আশেপাশের যুবকরা এবং যৌন সংক্রমণ, এর প্রধান মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কেন্দ্র আশ্বস্ত করেছে যে, যেকোনো প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *