ডোডা সংঘর্ষ: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে জম্মুতে পাকিস্তানবিরোধী প্রতিবাদ
ডোডায় সংঘর্ষ:
সোমবার জম্মু-কাশ্মীরের গোটা জেলায় সেনাবাহিনী এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের যৌথ অভিযানের পরে দেশ এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয় এবং সেই সংঘর্ষে চারজন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান যার মধ্যে একজন অফিসারও ছিলেন।
এই ঘটনায় জম্মু ও কাশ্মীরের এলজি মনোজ সিনহা শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এবং তিনি সন্ত্রাসবাদীদের পরিকল্পনা প্রতিহত করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেছেন ডোডায় সংঘর্ষে আমাদের সেনা সদস্য এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ কর্মীদের উপর যে কাপুরুষাচিত হামলা হয়েছে তাতে তিনি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে শিবসেনা এবং ডোগরা ফন্টের সদস্যরা ১৬ই জুলাই ২০২৪ তারিখে জম্মুর ডোডায় সংঘর্ষে চারজন সেনা কর্মী নিহত হওয়ার পর তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
“X” এর একটি পোস্টে L-G মনোজ কুমার সিনহা বলেছেন-“আমরা আমাদের সেনাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেব এবং সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব। আমি জনগণকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং আমাদের সঠিক তথ্য প্রদানের আহ্বান জানাই, যাতে আমরা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান তীব্র করতে এবং সন্ত্রাসের পরিকাঠামোকে নির্মূল করতে পারি।”
তিনি শহীদ সেনাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন – “আমি ডোডা জেলায় আমাদের সেনা সদস্য এবং জেকেপি কর্মীদের উপর কাপুরুষোচিত হামলার বিষয়ে গভীরভাবে দুঃখিত। আমাদের দেশ রক্ষায় যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের সাহসী সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা,”
১৫ ই জুলাই সন্ধ্যায় ডোডা জেলার বনাঞ্চলে গুলির লড়াই শুরু হয়েছিল যা গত তিন সপ্তাহের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী এবং জঙ্গিদের মধ্যে এটি ছিল তৃতীয় বড় সংঘর্ষ।
১৫ জুলাই রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের বিশেষ অপারেশন টিম এর সেনারা ডোডা শহর থেকে ৫৫ কিমি দূরে দেসা বনাঞ্চলের ধারি গোট উড়ারবাগিতে একত্রিত হয়ে একটি বেষ্টনীর তৈরির মাধ্যমে অনুসন্ধান অভিযান শুরু করেন। তখনই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ শুরু হয় বলে অফিশিয়ালি জানানো হয়েছে।
পরের দিন অর্থাৎ ১৬ই জুলাই জম্মু-কাশ্মীরের ডোডা জেলার ভাদরওয়াহতে গুলির লড়াইয়ে আহত হয় পাঁচজন সেনাকর্মী এবং তাদের মধ্যে একজন অফিসারও ছিলেন। তাদের মধ্যে ওই অফিসার সহ চারজন নিহত হন।নিহত হওয়ার পর সংঘর্ষস্থলে সেনাবাহিনীর যানবাহন দ্রুত ছুটে যায়। অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী সংঘর্ষে নিহতারা হলেন ক্যাপ্টেন ব্রিজেস থাপা, নায়েক ডি রাজেশ, সিপাহী বিজেন্দ্র এবং সিপাহী অজয়।
পাকিস্তানবিরোধী প্রতিবাদ:
সোমবার জম্মু-কাশ্মীরের ডোডা জেলায় সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে চার জন সেনা কর্মী নিহত হওয়ার পর তারপরের দিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই জম্মুতে পাকিস্তান বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদকারীরা প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং তাদের কুশপুতুল পোড়ায়।
শিবসেনা ডোগরা ফ্রন্ট (SSDF), মিশন স্টেটহুড এবং আরো বেশ কয়েকটি নাগরিক সমাজের দল শহরজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। প্রতিবাদকারীরা জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সমর্থন করার জন্য, এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে পরোক্ষে মদত দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে নিন্দা জানায়।
জম্মু ও কাশ্মীরের একটি আঞ্চলিক দল মিশন স্টেটহুড, তারা নিউ প্লট এলাকায় একটি বিক্ষোভের আয়োজন করে দলের সভাপতি সুনীল ডিম পেলের নেতৃত্বে এবং প্রতিবাদ কারীরা কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদে মধুর দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন। ডিম্পল আক্রমণটিকে কাপুরুষাচিত বলে বর্ণনা করেছেন এবং পাকিস্তানের যে সমস্ত সন্ত্রাসি, স্লিপার সেল এবং ওই অঞ্চলের গাইডদের যারা এই আক্রমণে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে দোষারোপ করেছেন ডিম্পিল। তিনি আরো বলেছেন, বর্তমান সরকার এই ধরনের হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে।
শিবসেনার ডোগরা ফন্টের কর্মীরা (SSDF) সভাপতি অশোক গুপ্তের নেতৃত্বে রানি পার্কে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। তারাও পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান দেয় এবং পাকিস্তানের কুশপুতুল পোড়ায়।
প্রতিবাদকারীরা সরকারের কাছে দাবি জানান যাতে উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
নাগরিক সমাজের সদস্যরাও শহরের মুঠি এলাকায় প্রতিবাদ জানান।
ডোডায় সংঘর্ষে চারজন সেনা নিহত হওয়ার পর কংগ্রেস কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালিয়েছে, যেখানে রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন যে, বারবার নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায়িত্ব সম্পূর্ণ রূপে সরকারকে নিতে হবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খার কে বলেছেন যে চারজন বীর সেনা শহীদ হওয়ার খবরে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত।
তিনি বলেছেন – এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং কাপুরুষাচিত আক্রমণের বিরুদ্ধে নিন্দনীয় কোন শব্দ প্রয়োগই যথেষ্ট হবে না।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ংকা গান্ধী ভদ্রা বলেছেন – জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসীদের সাথে সংঘর্ষে একজন সেনা অফিসার সহ চার জন সেনা শহীদ হওয়ার খবর অত্যন্ত দুঃখজনক।
কংগ্রেসের মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা সর্বশেষ হামলার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালিয়েছেন এবং বলেছেন দেশ এর উত্তর চায়।
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং শোকস্তব্ধ পরিবারের প্রতি তার গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি বলেছেন একের পর এক এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনক। ২০০৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক দশকের সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণ কর্মসূচির পর জম্মু অঞ্চল তুলনামূলকভাবে শান্তি ছিল তবে গত কয়েক মাসের সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিককালে তীর্থযাত্রীদের বাসায় হামলাটিও অন্তর্ভুক্ত যেখানে ৯ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছিল।
Pingback: কাশ্মীরে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গুলিতে চার সেনা নিহত: সন্ত্রাসবাদীদের হামলার শিকার নিরাপত্তা বাহ