কাশ্মীরে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গুলিতে চার সেনা নিহত: সন্ত্রাসবাদীদের হামলার শিকার নিরাপত্তা বাহিনী
খুব সাম্প্রতিককালে ভারত শাসিত কাশ্মীরে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সাথে গুলির লড়াইয়ে চারজন সেনা নিহত হয়েছে এটি বিতর্কিত জম্মু-কাশ্মীর সীমা অঞ্চলের হওয়া সাম্প্রতিককালের আক্রমণ গুলির মধ্যে সর্বশেষ আক্রমণ।
সোমবার জম্মুর ডোডা জেলার জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনী এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের যৌথ অনুসন্ধানমূলক অভিযান চালানোর সময় তাদের ওপর অতর্কিত গুলি চালানো হয় দেসা নামক এলাকায়।
ওই অঞ্চলের একটি অংশে গত সপ্তাহেই পাঁচ জন সেনা নিহত হয়েছিল কারণ তাদের গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল অতর্কিতে, যা ভারত পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয়।
ভারত শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ১৯৮৯ সাল থেকে এমনিতেই কাশ্মীরে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে তবে তা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কিছুটা সহিংসতা অঞ্চলগুলিতে লক্ষ্য করা যায়।
সে দিক থেকে দেখতে গেলে জম্মু অঞ্চল তুলনামূলকভাবে শান্ত, কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সেই অঞ্চল গুলিতে রক্তপাত বেশ বেড়েছে অন্তত জুন মাস থেকে এখনো পর্যন্ত ওই অঞ্চলে আটটি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
গত মাসেরই ঘটনা যেখানে সন্দেহাজন কিছু জঙ্গীর একটি যাত্রী বোঝায় বাসে অতর্কিতে হামলা চালায় বাসটি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছিল এই অতর্কিত হামলায় নজন প্রাণ হারায়, এবং ৩৩ জন আহত হয়েছিল।
এরপর ৮ই জুলাই এর ঘটনা যেখানে কাকুয়া জেলার এক হামলায় পাঁচ জন সেনা নিহত হয়েছিল।
সোমবার রাতে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গীরা সেনাদের দিকে গুলি চালাতে শুরু করলে, ভারতীয় সেনার সাথে তাদের গুলির লড়াই শুরু হয় বলে প্রতিবেদনগুলি থেকে জানা যাচ্ছে।
ভারতীয় সেনা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তাদের কাছে এই হামলার বিষয়ে আগে থেকেই খবর এসেছিল গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই অনুসন্ধান চালানোর সময় সেনাবাহিনীর উপর গুলি চালানো হয়। সেই গুলির লড়াইয়ে পাঁচ জন সেনা গুরুতর আহত হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে চারজন পরে মারা যান যার মধ্যে একজন অফিসারও ছিলেন। জঙ্গিরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য ওই এলাকায় তাড়াতাড়ি অতিরিক্ত সেনাবাহিনী পাঠানো হয়েছে বলে অফিশিয়ালি জানানো হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে একটি অনলাইন পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা, নায়েক ডি রাজেশ, সিপাহী বিজেন্দ্র এবং সিপাহী অজয় তাদের কর্তব্য পালনের সময় দেশের সুরক্ষার স্বার্থে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সকল বিভাগ থেকে এবং সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বীর সেনাদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, এবং ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা, নায়েক ডি রাজেশ, সিপাহী বিজেন্দ্র এবং সিপাহী অজয়, যারা জম্মুর ডোডায় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান চালানোর সময় তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের স্বার্থে, ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই সমস্ত বীর সেনার পরিবারের এই শোকের মুহূর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন।
হিমালয়ের কাশ্মীর অঞ্চলটি দশকের পর দশক ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। বারবারই সীমা নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম পরিস্থিতিতে পৌঁছই। দিল্লি বারবার ইসলামাবাদকে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের প্ররোচনা দেওয়া ওই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য এই অভিযোগ বারবারই ভারতের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এবং পাকিস্তান বারবারই তা অস্বীকার করে।
অফিসিয়ার খবর অনুযায়ী জম্মুর ডোডা জেলায় গোয়েন্দাদের থেকে পাত্তুৎ তথ্য অনুযায়ী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের যৌথ অভিযান চালানো হয়। তখন তাদের সাথে বেশ ভারী গুলিবিনিময় হয় জঙ্গীদের এবং প্রাথমিক রিপোর্টে বীর সেনাদের আহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল একটি পোস্টে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই ঘটনার পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সাথে কথা বলেছেন এবং সেখানকার পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। খুঁটিয়ে জানতে চেয়েছেন সেখানকার খবরা খবর।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সৈন্যদের মৃত্যুর খবরে গভীর মর্মাহত হন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি হার্দিক সমবেদনা জানিয়েছেন।গত মাসেই, প্রধানমন্ত্রী জম্মু অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী সমস্ত রকম কার্যকলাপ বন্ধের জন্য সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে বলেছিলেন।
গত কয়েক মাসে জম্মু এলাকায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। জঙ্গিরা ৫০০ মিটার দূরত্বে থাকা ট্রাকগুলিকে গ্রেনেট দিয়ে লক্ষ্যবস্তু বানায়, এবং বর্মভেদকারী গুলি ব্যবহার করে ও M4 অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করে। গত ৩২ মাসে জম্মু এলাকায় কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন ৪৮ জন সেনা। পঞ্চ ও রাজৌরি জেলায় যে সন্ত্রাসবাদী হামলা শুরু হয়েছিল তা এখন গোটা জম্মু জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলটি কয়েক বছর আগেও শান্ত এবং সন্ত্রাসমুক্ত ছিল। তবে এই সন্ত্রাস যাতে আর বাড়তে না পারে, সে বিষয়ে সেনাবাহিনী যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে।
Pingback: Kupwara Gunfight: পাকিস্তানের সীমান্ত অ্যাকশন টিমের হামলায় ভারতীয় সৈনিক নিহত -