আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ Sandip Ghosh সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার: আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে
সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) সোমবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে এবং আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৯ আগস্ট ৩১ বছর বয়সী এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার মামলাটি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার পর তাকে আর জি কর এর অধ্যক্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। তার ওপর ক্রমাগত চলছিল সিবিআই জেরা, কিন্তু তা সত্ত্বেও এতদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
সংক্ষেপে:
- সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
- ডাক্তার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর তিনি আর জি কর হাসপাতালের প্রিন্সিপাল পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
- কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে ধর্ষণ-হত্যার তদন্তের দায়িত্ব হাইকোর্টের আদেশে সিবিআই গ্রহণ করে।
- সোমবার সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে, যেখানে গত মাসে ৩১ বছর বয়সী এক প্রশিক্ষণরত ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল।
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও গ্রেফতার
সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে যে সন্দীপ ঘোষ আর জি কর হাসপাতালের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, প্রতারণা এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়াও সিবিআই তাকে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৭ ধারায় অভিযুক্ত করেছে। তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আগে সিবিআই তাকে দুই সপ্তাহ ধরে দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এমনকি তাকে পলিগ্রাফি পরীক্ষাতেও অংশগ্রহণ করতে হয়েছে।
ধর্ষণ ও হত্যা মামলা এবং তার প্রভাব
গত আগস্ট মাসে এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে আর জি কর হাসপাতালের একটি সেমিনার কক্ষে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। তার অর্ধ-নগ্ন মৃতদেহ ৯ আগস্ট উদ্ধার করা হয়, যাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সহিংসতার সূত্রপাত হয়। এই ঘটনার পর, সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্ট তার দায়িত্বহীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর এবং সিবিআইয়ের কার্যক্রম
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এস আই টি) থেকে তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়। এরপরেই সিবিআই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং ধর্ষণ-হত্যার তদন্ত শুরু করে। তদন্তের সময় বিভিন্ন ধরনের তথ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়, যার ভিত্তিতে সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষের তিন সঙ্গী
সন্দীপ ঘোষের পাশাপাশি তিনজনকে আরও গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তারা হলেন বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা এবং নিরাপত্তা কর্মী আফসার আলি খান। তদন্তে উঠে এসেছে যে, এই তিনজন হাসপাতালের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
চিকিৎসা পেশার মূল্যায়ন ও প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) সন্দীপ ঘোষের সদস্যপদ স্থগিত করেছে। আইএমএ-র শৃঙ্খলা কমিটি শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, সন্দীপ ঘোষকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও, ছাত্রদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে সেই পদে তার যোগদান ব্যর্থ হয়।
সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারের ঘটনা এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার গ্রেফতার ও সিবিআইয়ের তদন্ত এখনও চলমান, যা অদূর ভবিষ্যতে এই ঘটনার চূড়ান্ত রায় নির্ধারণ করবে। এই ঘটনায় দেশের চিকিৎসা পেশার প্রতি জনসাধারণের আস্থা আরও একবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সন্দীপ ঘোষ এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি প্রমাণিত হলে, এটি পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে। এছাড়াও, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।