Teachers’ Day 2024: কেন প্রতিবছর পালন করা হয় শিক্ষক দিবস?
শিক্ষক দিবস ভারতের একটি বিশেষ দিন, যা প্রতি বছর ৫ই সেপ্টেম্বর উদযাপিত হয়। এটি এমন একটি দিন যখন আমরা আমাদের জীবনে যাদের থেকে শিক্ষা পেয়েছি তাদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, যেমন স্কুল শিক্ষকদের থেকে শুরু করে কলেজের অধ্যাপক বা একাডেমিক ক্ষেত্রের বাইরের প্রশিক্ষকদের প্রতিও। এই দিনটি শিক্ষাবিদ ও ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মবার্ষিকী হিসেবে পালিত হয়। ১৯৬২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উদযাপন শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং সমাজে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে উদযাপন করা হয়।
শিক্ষক দিবসের ইতিহাস
৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ সালে ভারতের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন ছিল। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষক দিবস পালিত হয়।
ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন রাজনীতিতে প্রবেশের আগে একজন সম্মানিত শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপক ছিলেন এবং ক্যালকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় কংগ্রেস ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক দর্শন কংগ্রেসে। তিনি অক্সফোর্ডের হ্যারিস ম্যানচেস্টার কলেজের প্রধান ছিলেন এবং তুলনামূলক ধর্ম সম্পর্কে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেকচার দিয়েছেন।
গল্প অনুযায়ী, তিনি যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি হন, তখন তার কিছু পুরানো ছাত্র এবং বন্ধুরা তাকে তার জন্মদিন উদযাপনের অনুমতি চাইলে তিনি উত্তর দেন, “আমার জন্মদিন উদযাপনের পরিবর্তে, এটি আমার গর্বিত সৌভাগ্য হবে যদি ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।”
তারপর থেকে তার জন্মদিনটি ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে এটি গুরু পূর্ণিমার সাথে মিশিয়ে ফেলা উচিত নয়, যা মূলত হিন্দু-বৌদ্ধ উৎসব এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক উদযাপনের জন্য পালিত হয়।
শিক্ষকদের অবদান: এক অনন্য দায়িত্ব
শিক্ষকরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তারা শুধুমাত্র পড়াশোনার মাধ্যমেই নয়, বরং একটি ব্যক্তির নৈতিকতা, চরিত্র এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। একজন শিক্ষক কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ থাকেন না; বরং তারা ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের প্রতিটি স্তরে তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং মূল্যবোধের মাধ্যমে পরিচালিত করেন।
শিক্ষকরা আমাদের সেই জ্ঞান দেন যা আমাদের পরিবার বা অন্যান্য যত্নকারীরা দিতে পারেন না। সমাজে তাদের ভূমিকা অমূল্য, কারণ শিক্ষকদের প্রভাবের মাধ্যমে তারা সমাজের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারেন। ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন রাষ্ট্রপতির সম্মান পেলেও তিনি নিজেও একজন শিক্ষক ছিলেন এবং শিক্ষকরা একটি জাতি গঠনে যে ক্ষমতা রাখেন তা তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারতেন। তাই তিনি তার জন্মদিনে শিক্ষকদের সম্মান জানানোর কথা স্মরণ করিয়েছিলেন।
ড. রাধাকৃষ্ণান নিজেও শিক্ষাকে সমাজের উন্নতির মূল চাবিকাঠি হিসেবে মনে করতেন। তার দৃষ্টিতে, একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শুধুমাত্র জ্ঞান বিতরণ করা নয়, বরং ছাত্রদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে এবং তাদের একটি সৎ ও নৈতিক জীবন গঠনে সাহায্য করা। এই দায়িত্ব পালনে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানই শিক্ষক দিবস উদযাপনের মূল প্রেরণা।
উদযাপনের গুরুত্ব ও কার্যক্রম
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে সারা দেশে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই দিনটি শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ হিসেবে দেখেন। বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে বক্তৃতা, নাটক, গান এবং নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এইসব অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের প্রশংসা করে এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
অনেক সময়, শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরি করা কার্ড, ফুল এবং উপহার দিয়ে শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানায়। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ছাত্র-ছাত্রীরা একদিনের জন্য শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যা শিক্ষকদের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে সাহায্য করে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা, যা তাদেরকে ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল ও যত্নশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
শিক্ষকদের প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
শিক্ষক দিবস শুধুমাত্র ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। UNESCO-এর উদ্যোগে ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়, যা শিক্ষকদের বৈশ্বিক স্বীকৃতির প্রতীক। তবে, ভারতের শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য এবং উদযাপনের পদ্ধতি একে আলাদা মাত্রা দেয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় প্রশাসন এবং সংগঠনগুলো শিক্ষক দিবস উদযাপনের জন্য বিশেষভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেখানে শিক্ষকদের জন্য পুরস্কার বিতরণ এবং সম্মাননা প্রদান করা হয়।
২০২৪ সালে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রধান নেতারা সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন এবং শিক্ষকদের অবদানের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এই ধরনের বার্তা এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শিক্ষকদের জন্য বিশেষ মর্যাদা বহন করে, যা তাদের প্রতি সমাজের সম্মান ও ভালোবাসার প্রতিফলন।
শিক্ষার ভবিষ্যৎ এবং শিক্ষকদের ভূমিকা
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে শিক্ষাক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। তবে, শিক্ষকদের ভূমিকা কখনও কমবে না। বরং, শিক্ষকরা এখন আরও চ্যালেঞ্জিং ও বহুমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের গাইড করা, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে তাদের শেখানোর নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা এবং সমাজের মূল্যবোধ বজায় রাখার দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর বর্তেছে।
ড. রাধাকৃষ্ণানের দৃষ্টিতে, শিক্ষার মাধ্যমে সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব এবং শিক্ষকরাই সেই পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি। তারই অনুপ্রেরণায় শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয়, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শিক্ষকদের সম্মান, মর্যাদা এবং অবদানকে কেবলমাত্র একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছর ধরে সম্মান জানানো উচিত।
শিক্ষক দিবস আমাদেরকে একটি সুযোগ দেয় সমাজের এই অমূল্য সম্পদগুলির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য। শিক্ষকেরা আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি সংকটে এবং প্রতিটি অর্জনে আমাদের পাশে থাকেন। এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি আমাদেরকে শিক্ষকদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং শ্রদ্ধা স্মরণ করিয়ে দেয়। শিক্ষকদের সম্মান ও অবদানের স্বীকৃতি শুধু শিক্ষক দিবসে নয়, বরং প্রতিদিনই প্রদর্শিত হওয়া উচিত।