জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরিতে সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক, তল্লাশি অভিযান জারি
সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরিতে একটি সেনা পোস্টে বড় সন্ত্রাসী হামলা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় গোলাগুলি চলেছে।
সংক্ষেপে:
- সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী হামলা ব্যর্থ করেছে
- রাজৌরিতে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে
- গুণ্ডা এলাকায় ভোর ৪ টায় গুলির লড়াই শুরু
- VDG এর বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ব্যর্থ
সোমবার অর্থাৎ আজ সকালে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরিতে একটি সেনা পোস্টে বড় জঙ্গি হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে ভারতীয় সেনা, তবে এই হামলা আটকাতে গিয়ে এক জওয়ান আহত হয়েছেন। এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাজৌরির একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এই হামলা ব্যর্থ করা হয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, এক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে এবং একজন জওয়ান এবং ভিডিজির একজন আত্মীয়, যার বাড়িতে হামলা হয়েছিল, আহত হয়েছে।সন্ত্রাস বাহিনীর সাথে ভারতীয় সেনা বাহিনীর গোলাগুলির লড়াই বর্তমানে অব্যহত।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সন্ত্রাসীরা রাজৌরির গুণ্ডা এলাকার একটি নিরাপত্তা পোস্টে গুলি চালানোর পর নিরাপত্তা বাহিনী জায়গাটা ঘেরে ফেলে ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে।
রাজৌরির প্রত্যন্ত গ্রামে হামলাকারীরা একটি নিরাপত্তা পোস্টে গুলি চালায়, সন্ত্রাসীরা রাজৌরির গুণ্ডায় একটি ভিডিসি (সদস্য) এর বাড়িতে আক্রমণ করে। তবে সন্ত্রাসী হামলা ব্যর্থ হয়েছে, কাছাকাছি সেনা ইউনিট প্রতিক্রিয়া জানায় এবং বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়।
রাজৌরির গুণ্ডা এলাকায় বর্তমানে গুলির লড়াই চলছে। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরিস্থিতি যাতে আরো খারাপ দিকে মোর না নেয় তাই হামলা প্রতিরোধের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুণ্ডা এলাকায় ভোর ৪টা নাগাদ সন্ত্রাসবাদীরা আচমকা একটি নিরাপত্তা পোস্টে হামলা শুরু করে, যার ফলে নিরাপত্তা কর্মীরা পাল্টা জবাব দেয়। তবে গোলাগুলির বিনিময় সংক্ষিপ্ত ছিল এবং পরবর্তীতে একটি তল্লাশি অভিযান শুরু করা হয়।
গত কয়েক মাসে জম্মু অঞ্চলে জঙ্গি হামলার বৃদ্ধি দেখা গেছে, যার মধ্যে কাঠুয়ায় একটি সেনা কনভয়ে সন্ত্রাসী হামলা এবং ডোডা ও উদমপুরে জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত সপ্তাহে, ভারতীয় সেনার একটি অংশ রাজৌরি জেলার সুনদারবানি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে সন্দেহজনক গতিবিধি নজরে আসায় গুলি চালায়। পৃথক আর একটি ঘটনায়, ডোডা জেলার কাস্টিগড় এলাকায় সন্ত্রাসীদের সাথে সংঘর্ষে দুই ভারতীয় সেনা সদস্য আহত হন।
ডোডা সংঘর্ষে চার সেনা সদস্যের আত্মত্যাগের পর:
ডোডা সংঘর্ষে কয়েক দিন আগেই চারজন ভারতীয় সেনা সদস্য, যার মধ্যে একজন অফিসারও ছিলেন, সন্ত্রাসীদের সাথে লড়াই করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ১৬ জুলাই, উত্তরাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম ভি সুচিন্দ্র কুমার, ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা, নায়েক ডি রাজেশ, সিপাহী বিজেন্দ্র এবং সিপাহী অজয় কুমার সিংহকে শ্রদ্ধা জানান, যারা ডোডায় সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের সময় অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
জম্মু অঞ্চলে ক্রমাগত ধারাবাহিক ভাবে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েই চলেছে। যা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামলার পর সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক হামলাটি সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর জম্মু পরিদর্শন এবং অঞ্চলে বেশ কয়েকদিন ধরে ঘটা ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার বৃদ্ধি মোকাবিলার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে ঘটেছে।
সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীদের একটি বেশ ভারী অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত দল গুণ্ডা গ্রামের একটি সেনা শিবিরে আক্রমণ করে। গুলি চালানো শুরু হয় ভোর ৪টা নাগাদ এবং এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে।
সেনাবাহিনীর ভারী পাল্টা জবাব সন্ত্রাসীদের পালাতে বাধ্য করলেও এটি ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর উপর আরেকটি বেশ মারাত্মক আক্রমণ।
শুক্রবার, ডোডা জেলায় একটি স্কুলে স্থাপিত অস্থায়ী সেনা শিবিরে ভারী গোলাগুলি এবং গ্রেনেড দিয়ে আক্রমণ করা হয়। একই এলাকায় গত সপ্তাহে চারজন সেনা, যার মধ্যে একজন ক্যাপ্টেনও ছিলেন, নিহত হন, এবং তার কয়েক দিন পর কাঠুয়ায় একটি ঘাঁটিতে হামলায় পাঁচজন সেনা নিহত হন।
জম্মু অঞ্চলে উচ্চ প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় এবং ধারাবাহিক হামলা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই আরও সেনা এবং বিশেষ কমান্ডো বাহিনী মোতায়েন করেছে।
গত ৩২ মাসে জম্মু অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলায় ৪৮ জন সেনা নিহত হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি হামলার পর সন্ত্রাসীরা নিজেদের কোনো ক্ষতি না করেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বহু ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন এই কদিনের হামলাতে যা বেশ উদ্বেগের কারণ।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী জম্মুতে সন্ত্রাসী হামলার বৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। কদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছিলেন যাতে সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপ গ্রহণ করতে এবং জম্মু অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে সেনাবাহিনীর সুবিধা হয়।
গত শুক্রবার কাশ্মীরের ডোডায় একটি স্কুলে অস্থায়ী সেনা ছাউনিতে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনে়ড দিয়ে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে খবর, পাকিস্তান থেকে জঙ্গিরা এ দেশে ঢুকে কাশ্মীরে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করতে জম্মুতে মোতায়েন করা হয়েছে প্যারা স্পেশাল ফোর্সের ৫০০ জন কমান্ডোকে। শুধু তা-ই নয়, উপত্যকায় বাহিনী পুনর্বিন্যাসের কথাও ভাবছে নিরাপত্তা বাহিনী।