বাজেট ২০২৪: কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো থেকে নকল, দাবি কংগ্রেস নেতাদের
কংগ্রেসের কটাক্ষ ও প্রতিক্রিয়া :
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী বাজেটকে ‘কুরসি বাঁচাও'(save the chair) প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। তাদের দাবি, এবারের বাজেট মোদি সরকার কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো থেকে ধারণা নিয়ে তৈরি করেছে, যদিও সেগুলির সঠিকভাবে বাস্তবায়ন তারা করতে পারেনি।
রাহুল গান্ধী ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার) এ এক পোস্টে বলেন, এটি একটি ‘কুরসি বাঁচাও’ বাজেট। তিনি আরও বলেন, মিত্রদের তুষ্ট করার জন্য, অন্যান্য রাজ্যগুলোর খরচে তাদের ফাঁপা প্রতিশ্রুতি প্রদান। সাধারণ ভারতীয়দের জন্য কোনও সুবিধা দেওয়া হয়নি। তিনি এটিকে, কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো ও পূর্বের বাজেটের কপিপেস্ট বলেছেন।
মল্লিকার্জুন খাড়গে হিন্দিতে করা এক পোস্টে বলেন, “মোদি সরকারের ‘কপিক্যাট বাজেট’ কংগ্রেসের ‘ন্যায় পত্র’ সঠিকভাবে কপি করতে পারেনি! মোদি সরকারের বাজেটে এনডিএকে বাঁচানোর জন্য অর্ধেক মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এটি দেশের অগ্রগতির বাজেট নয়, এটি ‘মোদি সরকার বাঁচাও’ বাজেট।”
সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখার সময়, খাড়গে বাজেটকে ‘হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে বাজেটের বণ্টন হয়েছে ‘প্রয়োজনের ভিত্তিতে নয়, বরং কুরসি বাঁচানোর জন্য’। তিনি আরো বলেন – “আমরা আশা করেছিলাম যে বাজেট কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাগুলি সমাধান করবে, যেমন MSP এর আইনি গ্যারান্টি, সার এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের ওপর সাবসিডি দেবে। কিন্তু এসব কিছুই বাজেটে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি জাতীয় জনগণনা উল্লেখ করে বলেন, সরকার বাজেটে এর জন্য কোনও তহবিল বরাদ্দ করেনি।
সিনিয়র কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, বেকারত্ব দেশের ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ এবং এ বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া ‘অতি অল্প’ যা ‘গুরুতর পরিস্থিতিতে’ সামান্য প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক জরিপে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে কয়েকটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে আলোচনা করা হয়েছে এবং অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যের তৃতীয় প্যারাতে এটি ১০ শব্দে বাতিল করেছেন।
চিদাম্বরম আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী NEET পরীক্ষা পদ্ধতি এবং জাতীয় পরীক্ষণ সংস্থার দুর্নীতি সম্পর্কিত গুরুতর বিষয়গুলির সমাধান করেননি। “বিভিন্ন রাজ্য দাবি করেছে যে NEET পরীক্ষা বাতিল করা উচিত এবং রাজ্যগুলির নিজেদের পদ্ধতিতে মেডিকেল শিক্ষার প্রার্থীদের নির্বাচন করার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া বাজেটে ছিল না।” কংগ্রেস নেতা বলেন “আমি অর্থমন্ত্রীকে স্কুল শিক্ষা নিয়ে উল্লেখ করতে শুনিনি। অথচ, সরকার নিটের সাথে জড়িয়ে রয়েছে, আপনি মনে রাখবেন, এটি স্কুল শিক্ষার শেষে একটি পরীক্ষা।” প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন যে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি প্রায় তার দলের প্রস্তাবিত Employment-linked Incentive (ELI) প্রকল্প, শিক্ষানবিশ প্রকল্পে ভাতা এবং অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স বিলুপ্তির ধারণা বাজেটে গ্রহণ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে, এআইসিসির মুখপাত্র এবং প্রফেশনাল কংগ্রেস ও ডেটা অ্যানালিটিক্সের চেয়ারম্যান প্রভীন চক্রবর্তী ‘এক্স’-এ করা এক পোস্টে সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টোকে ‘মুসলিম লীগ’ এর দলিল বলে অভিহিত করেছিলেন। আজ, তার সরকারের বাজেট এখান থেকেই কপি-পেস্ট করেছে। এবং আমি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করছি না!”
আরেকটি পোস্টে তিনি অর্থনৈতিক জরিপ থেকে একটি অংশ তুলে ধরেছেন যেখানে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত বিনিয়োগ প্রকল্প এবং শিক্ষানবিশ কাঠামোর পুনর্গঠন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো থেকে কিছু অংশ শেয়ার করেছেন যেখানে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে নির্বাচিত হলে তারা ইএলআই প্রকল্প এবং চাকরির জন্য শিক্ষানবিশ অধিকার বাস্তবায়ন করবে। তিনি আরও যোগ করেন। “অনুকরণ হলো চাটুকারিতা সর্বোত্তম রূপ!”
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ “এক্সে” এক পোস্টে বলেন “তবে, বাজেটে ঘোষিত ELI গুলির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রথমবারের জন্য ELI নতুনভাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশকারী সকল ব্যক্তিকে এক মাসের মজুরি প্রদান করে। এই প্রকল্পটিতে ভারত যে দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে,” এবং এনডিএ সরকারের বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়গুলি যথেষ্ট নয় বলে তিনি ব্যাখ্যা করেন-
“ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো চাকরির অভাব। এই প্রকল্পটি তাদের উপকৃত করে যারা ইতিমধ্যেই ভাগ্যবান এবং আনুষ্ঠানিক চাকরি পেয়েছে। যারা চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না – তারা সংখ্যায় অনেক বেশি এবং তাদের জরুরি সহায়তার প্রয়োজন – তাদের কোনো উল্লেখ এখানে নেই” ।
তিনি আরও বলেন – “ভারত নারীদের উৎপাদনশীল শ্রমশক্তিতে যোগদানের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই প্রকল্পটি লিঙ্গ-অন্ধ বলে মনে হয়, যা যুব নারীদের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয় না এবং কেবল সেই নারীদের উপকৃত করে যারা ইতিমধ্যে চাকরি পেয়েছে। এটি নারীদের চাকরি খোঁজার জন্য কোনো উৎসাহ প্রদান করে না।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন “দুটি নিয়োগকর্তার ELI গুলিও পুনর্গঠনের প্রয়োজন। আইএনসি প্রস্তাব করেছিল ট্যাক্স ক্রেডিটের মাধ্যমে ELI সরবরাহ করা হবে, যেখানে বাজেটে ELI সরবরাহ করা হয় ইপিএফও অবদানের জন্য প্রতিদানের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়াটি কার্যকরভাবে এই নিয়োগকৃত কর্মীদের মজুরির উপর একটি সাবসিডি – যেখানে করের উপর ছাড় দেওয়া হয় ফার্মের মালিকদের যা নিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় ছিল।”
তিনি উপসংহারে বলেন:
“মনে হয় ৪ জুনের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, এবং নৈতিক পরাজয় এই সরকারকে কিছু মূল বিষয় স্বীকার করতে শিখিয়েছে – তবে তাদেরকে এখনও দক্ষতায় রূপান্তরিত করেনি!”