Wayanad landslide: বন্য হাতি সারারাত পাহারা দিলো একটি পরিবারকে
ওয়েনার জেলার চূরালমালায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিধসে, আটকে পড়েছিল একটি পরিবার, আর এই কঠিন মুহূর্তে কিছু বন্য হাতির সহানুভূতি তাদের রক্ষা করেছিল।
এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া একটি পরিবার তাদের সঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে বিস্ময়কর একটি গল্প, যা বেঁচে থাকা, সহানুভূতি, এবং মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে নীরব বোঝাপড়ার উদাহরণ। এই বোঝাপড়া, মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে গভীর সম্পর্কের ভিত তুলে ধরে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কেরালার, ওয়েনার জেলার ভূমিধসে এখনো পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৩০৮ জন, আহতের সংখ্যা ২৬৪। ভূমিধসের ফলে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং রাস্তার ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে, প্রচুর গাছ উপড়ে যেখানে সেখানে পড়ে আছে, এবং জলাশয়গুলো বৃষ্টির জলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে ভারী বৃষ্টিপাতের পর, চূরালমালা গ্রামের বিভিন্ন অংশে পরপর তিনটি বিশাল ভূমিধস ঘটে, যা রাস্তা ও সেতু ধ্বংস করে এবং বহু মানুষকে নদীর স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
এই ভূমি ধসের কবল থেকে বেঁচে ফেরা একটি পরিবার তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নিয়েছে।
এই ঘটনার সময়, সুজাতা আনিনানচিরা এবং তার পরিবারের সদস্যরা একটি বিশাল ভূমিধসের ফলে তাদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়েছিলেন। তবে এই কঠিন সময়ে একটি দাঁতাল হাতি এবং দুটি মাদি হাতির সহানুভূতি তাদের রক্ষা করেছিল।
ভূমিধসের দিন:
ঘটনার দিনটি ছিল সোমবার। চূরালমালায় তখন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। সুজাতা মুণ্ডাকাইয়ের হ্যারিসনস মালয়ালাম টি এস্টেটে ১৮ বছর ধরে চা পাতা সংগ্রহকারী হিসেবে কাজ করছেন, সেই রাতে এক অজানা আশঙ্কায় ১.১৫-এ ঘুম ভেঙে উঠে পরেন। তার স্বামী কুট্টান, মেয়ে সুজিথা, এবং নাতি-নাতনি সুরাজ ও মৃদুলা তখন বাড়িতেই ছিল।
টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে, সুজাতা জানান, “সোমবার রাতে ৪টা থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ১.১৫-এ ঘুম থেকে উঠলাম এবং খুব শীঘ্রই একটি বিশাল শব্দ শুনলাম। তারপরই জল আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ল এবং আমাদের বাড়ির ছাদ আমাদের ওপর ভেঙে পড়ল।” এতে তাদের মেয়ে সুজিথা গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল। সুজাতা সাহসিকতার সাথে কিছু ইট সরিয়ে প্রথমে নিজেকে মুক্ত করেন।
পরিবারের বেঁচে থাকার লড়াই
সুজাতা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে আসার পর, ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকে তার নাতনির কান্নার শব্দ শুনতে পান। অনেক প্রচেষ্টার পর, তিনি মৃদুলাকে ধ্বংসাবশেষ থেকে বের করে আনেন। একইভাবে, পরিবারের অন্য সদস্যরাও নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারা প্রবল জলস্রোতের মধ্য দিয়ে পার হয়ে কাছের একটি টিলায় উঠে যায়।
হাতির সাথে অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ
টিলায় পৌঁছে তারা একটি ভীতিকর দৃশ্যের মুখোমুখি হন: একটি দাঁতাল হাতি এবং দুটি মাদি হাতি তাদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। সুজাতা এবং তার নাতনি ভয়ে একটি সুপারি গাছ আঁকড়ে ধরে শুয়ে পড়েছিলেন। তখন ছিল গভীর রাত, এবং হাতিরা তাদের থেকে মাত্র অর্ধ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিল।
সুজাতা বলেন, “অন্ধকার ছিল, এবং আমাদের থেকে অর্ধ মিটার দূরে একটি বন্য দাঁতাল দাঁড়িয়ে ছিল। ওদেরও ভীত মনে হচ্ছিল। আমি হাতির কাছে প্রার্থনা করে বললাম আমরা একটি বিপর্যয় থেকে বেঁচে গেছি এবং রাতে শুয়ে থাকার জন্য আমাদের অনুমতি দেওয়ার জন্য বললাম যাতে আমাদের কেউ উদ্ধার করতে পারে।”
সুজাতা দেখেন যে দাঁতাল হাতিটি তাদের প্রার্থনা বুঝতে পারল এবং কোন ক্ষতি না করে স্থির থাকল। তিনি বলেন, “আমরা দাঁতালের পায়ের খুব কাছাকাছি ছিলাম, কিন্তু এটি আমাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারল। আমরা সকাল ৬টা পর্যন্ত সেখানে ছিলাম, এবং হাতিরাও আমাদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সেখানে ছিল। ভোরে আমি তাদের চোখে জল দেখতে পাচ্ছিলাম।”
অথচ কয়েক বছর আগে এই কেরালাতেই আনারসের ভেতরে বিস্ফোরক দিয়ে একটি গর্ভবতী হাতিকে মেরে ফেলা হয়েছিল।
শশী থারুরের প্রতিক্রিয়া:
এই গল্পটি কংগ্রেস নেতা শশী থারুর তার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছেন, “ভূমিধসে গৃহহীন পরিবারটি তাদের দুর্দশা একটি দাঁতালের কাছে জানায়, যে তাদের জন্য শোক প্রকাশ করেছিল এবং সারা রাত তাদের আশ্রয় দিয়েছিল…।”
ওয়েনারের এই ঘটনা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার গল্প নয়, এটি মানুষের এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে গভীর সম্পর্কের উদাহরণ। সুজাতা এবং তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতির প্রতিদান হিসেবে হাতিটির কাছ থেকে প্রাপ্ত সহায়তা তাদের এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিল। এই ঘটনাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতি এবং জীবজন্তুর সঙ্গে আমাদের সহানুভূতির সম্পর্ক কতটা নিপুন।
এই ধরনের ঘটনা আমাদেরকে মানবিকতা এবং সহানুভূতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করে। এটি প্রমাণ করে যে বিপদে পড়লেও, সহানুভূতির মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু অর্জন করতে পারি।
ওয়েনার ভূমিধসের এই গল্পটি সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছে এবং আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে আমরা সবাই একে অপরের সাথে যুক্ত, প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণীর সাথেও।