খবর প্রতিদিন

Wayanad landslides: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৩, এখনও নিখোঁজ বহু

Wayanad landslides:

কেরালার ওয়েনাড জেলার ভূমিধসে ধারাবাহিক ভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৩, এবং এখনও নিখোঁজ কয়েক ডজন মানুষ।

Wayanad landslides

কেরালার ওয়েনাড জেলার ধারাবাহিক ভূমিধসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৪৩ হয়েছে, এবং এখনো শতাধিক মানুষ আহত ও আটকে রয়েছে। ভূমিধসের ফলে ঘরবাড়ি এবং রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, প্রচুর গাছ উপড়ে যেখানে সেখানে পড়ে আছে, যার ফলে উদ্ধার কার্য ব্যাহত হচ্ছে, এবং জলাশয়গুলো বৃষ্টির জলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার ও সন্ধান চালানোর প্রচেষ্টা সমস্ত উপলব্ধ ব্যবস্থার সাথে জোরকদমে চলছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে ভারী বৃষ্টিপাতের পর, চূরালমালা গ্রামের বিভিন্ন অংশে পরপর তিনটি বিশাল ভূমিধস ঘটে, যা রাস্তা ও সেতু ধ্বংস করে এবং নদীতে বহু মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই বিপর্যয়ে প্রায় ২৫০ জন মানুষ আটকে পড়েছিলেন, এবং শত শত বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।

 

ওয়েনাড ভূমিধসে দ্রুত উদ্ধার কার্য চলছে: 

কেরালা রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (KSDMA) অনুযায়ী, উদ্ধার কার্যক্রমে ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ, সিভিল ডিফেন্স, NDRF এবং স্থানীয় জরুরী প্রতিক্রিয়া দলের সদস্যরা মিলিত হয়ে উদ্ধারকার্য পরিচালনা করছে। কান্নুর ডিএসসি কেন্দ্র এবং কোঝিকোডের ১২২ টিএ ব্যাটালিয়ন থেকে প্রায় ২০০ জন ভারতীয় সেনা কর্মী ঘটনাস্থলে রয়েছেন। এর পাশাপাশি, দুটি বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার, একটি এমআই-১৭ এবং একটি এএলএইচ, উদ্ধারকাজে  সহযোগিতা করছে।

Wayanad Landslide, Kerala

১২০ এরও বেশি উদ্ধারকৃত এবং আহত ব্যক্তিদের ওয়েনাডের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রী ভীণা জর্জের মতে, ১১৬ জনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

দুর্যোগ এবং অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে ৩১ জুলাই বুধবার সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ১১টি জেলায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে – কাসারগোড, কান্নুর, কোঝিকোড, ওয়েনাড, মালাপ্পুরম, পালাক্কাড, থ্রিসুর, ইডুক্কি, এরনাকুলাম, আলাপ্পুঝা এবং পাথানামথিত্তা।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (IMD) ৩১ জুলাই এবং ১ আগস্ট ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে ওয়েনাড এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে ‘কমলা’ সতর্ক বার্তা জারি করেছে। আবহাওয়া দপ্তর ৩১ জুলাই, ১ ও ২ আগস্ট ভারী বৃষ্টিরও পূর্বাভাস দিয়েছে। আইএমডি বলেছে, ৩০ এবং ৩১ জুলাই কেরালায় মাঝে মাঝে ৩০-৪০ থেকে ৫০ কিমি/ঘন্টা বেগে প্রবল বাতাস বইতে পারে।গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অনেক স্থানে ৩০০ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

উড়িষ্যার সিএমও মঙ্গলবার বলেছে যে, ওয়েনাডে ভূমিধসে তাদের রাজ্যের দুজন লোক নিখোঁজ হয়েছে। ওয়েনাডে ব্যাপক ভূমিধসে বহু প্রাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে উড়িষ্যার রাজ্য সরকার কেরালা সরকারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। কেরালা রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধারকৃত দুটি ওড়িয়া ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং অন্য দুইজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

Wayanad landslides

বন্যার জলে ভেসে যাওয়া বেশ কিছু মানুষের মৃতদেহ, মুন্ডাক্কাই থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে নিলাম্বুর গ্রামে, চালিয়ার নদীর জল থেকে পাওয়া গেছে । দুর্যোগের ভয়াবহ ছবি ভিডিওগুলি সামাজিক মিডিয়াতেও প্রকাশিত হয়েছে।

স্থানীয় আধিকারিকদের মতে, দুর্যোগের শিকার বেশিরভাগ মানুষই চা বাগানে কাজ করতেন এবং  রাস্তার পাশেই বা রোপনক্ষেত্রের সঙ্গেই  তৈরি ছোট ছোট ঘরে বাস করতেন।

মঙ্গলবারেই কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠক চলাকালীন, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধার কার্যক্রম মূল্যায়ন করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া, বাহিনীর মোতায়েন, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সতর্কতা এবং ত্রাণ শিবিরের সুবিধাগুলিও পর্যালোচনা করেন। তিনি ঘটনায় প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করেন এবং তিনি জানান যে, ওয়েনাডে ৪৫টি ত্রাণ শিবিরে ৩,০৬৯ জন লোক রয়েছে এবং পাঁচজন মন্ত্রী ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের প্রচেষ্টার সহযোগিতা করছেন।

এদিকে, দেশজুড়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, লোকসভার বিরোধী নেতা এবং সাবেক ওয়েনাড আইনপ্রণেতা রাহুল গান্ধী সহ সমবেদনা প্রকাশ করেছে। ভারতে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী শোম্বি শার্পও ধ্বংসাত্মক ভূমিধসের বিষয়ে শোক প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী কেরালা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করার আশ্বাস দিয়েছেন এবং ইতিমধ্যেই  মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন।

Wayanad landslides

কেরালার এই অঞ্চলগুলি এমনিতেই প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা প্রবণ, এখানে ২০১৮ সালের বন্যায় প্রায় ৪০০ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। কেরালা সরকারের উচিত ছিল আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যাতে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে তৎক্ষণাৎ তার সামলানো যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে কেরালার প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা এবং প্রস্তুতির অভাব তুলে ধরেছে। ভূমিধস ও বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে দুর্যোগ নামলেও তা সামলানোর কাঠামো আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *